আরাফাত রায়হান সাকিব॥ শরীর কিংবা হাত-পায়ের যেকোন রোগে মাটির মূর্তি ও সদৃশ হাত-পা ফজুশাহ মাজারে মানত করলে ভালো হয়ে যায় রোগ! মাজারে মানতের ফলে মৃত্যুশয্যা থেকেও সম্পূর্ন সুস্থ হয়েছে অনেকে! এমনই কুসংস্কারে গত কয়েক যুগ ধরেই মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলা আড়িয়ল ফজুশাহ মাজারে মূর্তি মানত ও প্রদান করে আসছে সরল বিশ্বাসী স্থানীয় মানুষেরা। আর এ কুসংস্কারকে পুঁজি করে প্রতারণার মূর্তি বিক্রির ব্যবসা চালাচ্ছে মাজারের স্বয়ং খাদেমরা। এদিকে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরপরই ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসামৎ হাসিনা আক্তার।
সরজমিনে রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখাযায়, মাজারের সামনেই ১৪টি টং দোকান। দোকান গুলোতে মাটির তৈরি মূর্তি, হাত-পা, চোখ-কান সহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বেচা-বিক্রি করছে। মাজারের সামনেই দিনের বেলা জ্বলছে মোমবাতি। কেউ মাজারে মুর্তি প্রদান করছে, আবার কেউ কথিত নিয়ম অনুযায়ী মাজারের চারদিকে আড়াই বার প্রদক্ষিণ করছে। সিজদাও দিতে দেখা যায় অনেককে। এছাড়াও আছে লাঠিতে তেল ঢেলে সে তেল শরীরের মাখার ব্যবস্থাও রয়েছে । রয়েছে গান বাজাঁনার ব্যবস্থাও। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মাজারটিতে যেন ধর্ম অবমাননার মহাউৎসব চলছে।
তবে স্থানীয়রা জানায়, যাকে ঘিরে মাজার সে ফজুশাহ কোন পীর-ওলি ছিলেন না। কঠিত আছে, যুবক বয়সে ফজু নিজের হাতে কবর খুড়ে সে কবরে ঢুকে পড়ে। এরপর স্বপ্ন দেখানো নির্দেশ অনুযায়ী বাড়ির লোকের কবরে মাটি দিয়ে সেখানে মাজার তৈরি করে। মাজারের সামনে দোকান গুলো মাজারের খাদেমদের। প্রথমে মোমবাতি-আগরবাতি ও পরে মূর্তির ব্যবসা জমজমাট হয় মাজারকে ঘিরে।
মাজারে আসা এক ভক্ত আয়শা আক্তার জানান, মায়ের পায়ে সমস্যা ছিলো মানত করেছি ,ভালো হয়েছে । তাই একটি মূর্তি দিয়ে গেলাম। একই কথা জানান আরেক ব্যক্তি নজরুল ইসলাম।
মাজারের খাদেম ইদ্রিস দেওয়ান জানান, পুর্নাঙ্গ মুর্তি ৩শ থেকে ৫শ টাকা, হাত-৭০ টাকা , পা-১৫০টাকা, চোখ ৩০টাকা, কান ২০টাকা দরে বিক্রি করে তারা। স্থানীয় কুমারবাড়ি থেকে তৈরি করে এনে ৫থেকে ৫০টাকা লাভে এসব বিক্রয় হয়। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ মাজারে আসে। সবার মনের বাসনাই পূর্ণ হয় মাজার মানতে। তবে মাজারের এ রীতি ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে কিনা এব্যাপারে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি তার কাছে। আরেক খাদেম শিকান্দার দেওয়ান জানান, কেউ মূর্তি কেউ ছাগল, মুরগ-মুরগি মানত করে। স্বর্নের অলংকারও দেয় অনেক।
এদিকে অনুসন্ধানে জানাযায়, মাজারে মূর্তি দেওয়ার পর সে মুর্তি আবারো দোকানে ফিরে আনেন খাদেমরা। একই ভাবে আবারো হয় বিক্রি। টাকা-পয়সা, মোরগ-মুরগি ,গরু-ছাগল ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন খাদেমরা। মানুষ ঠকিয়ে র্দীঘদিন যাবতই চলছে তাদের এ ব্যবসা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসদেন টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসামৎ হাসিনা আক্তার। একইদিন রাতে তিনি ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে ১৪টি দোকানে থাকা এসব মূর্তি, মাটির হাত-পা বিনষ্ট করেন। দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজকে তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের কাগজের মাধ্যমে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সরজমিনে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পাই। এটি একটি সু-স্পষ্ট প্রতারণা কোন ধর্ম কিংবা বিজ্ঞান এর সমর্থন করে না। দোকানগুলো বন্ধ করা হয়েছে। খাদেমদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসব কুসংস্কার কর্মবন্ধ করার জন্য।