নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বিশ^মানবের অকৃত্রিম সুহৃদ। তিনি ছিলেন হিমালয়সম উচ্চ ব্যক্তিত্বের অধিকারীÑ নিরস্ত্রীকরণে বিশ^াসী জগৎখ্যাত এক শান্তি সংগ্রামী। তিনি আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস।
১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য জননেতা আমির হোসেন আমু এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, গণআজাদী লীগের সহ-সভাপতি ড. নাসির উদ্দিন খান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণতন্ত্র পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মানবতার ইতিহাসে বেদনাবিধূর কালিমালিপ্ত একটি দিন। ১৫ই আগস্ট বিশ^মানব হারিয়েছে তাদের এক অকৃত্রিম সুহৃদকে। বাঙালি হারিয়েছে তাদের স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের মহানায়ককে। বঙ্গবন্ধু আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধু নিরস্ত্রীকরণে বিশ^াসী জগৎখ্যাত এক শান্তি সংগ্রামে ছিলেন। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম একজন প্রবক্তা ছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশে^র মুক্তিকামী মানুষের বন্ধু ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন।
সভার সভাপতি আমির হোসেন আমু বলেন, এক ধরনের বুদ্ধিজীবী আছেন যারা বঙ্গবন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে খাটো করার অপচেষ্টা করে। ব্যক্তি খালেদা জিয়াকে তারা পছন্দ করুক বা না করুন, কিন্তু খালেদা জিয়াকে তারা শেখ হাসিনার বিপরীত একটি নেতৃত্ব হিসেবে দাঁড় করিয়ে রেখে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনীতিকে খাটো করা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে অনুপ্রাণিত করাই তাদের কাজ। জিয়াউর রহমান যে কাজটা শুরু করেছিলেন খালেদা জিয়া সেটার পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন মতিউর রহমান নিজামী ও মুজাহিদদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সংসদে এনে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া ও প্রতিষ্ঠিত করার যে ভূমিকা তা তো তারাই (বিএনপি) করেছে। তাহলে তাদের স্বপক্ষ গ্রহণ ও তাদেরকে হাইলাইট করার অর্থই হচ্ছে ওই রাজনীতিকে হাইলাইট করা। তাই আজকে বুঝতে হবে তারা মূলত খালেদা জিয়া প্রেমিক নয়- তারা পাকিস্তান প্রেমিক, তারা মূলত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির প্রেমিক।
সভায় তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার মানুষকে ভালোবাসতেন। তাঁর জীবনের স্বপ্ন ছিল দুটিÑ একটি বাঙালির স্বাধীনতা আর একটি বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত করে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলায় রূপান্তর করা। একটি তিনি করে গেছেন আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আরেকটি করার জন্য বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে যখন শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছিলেন তখনই বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর দুটি স্বপ্নের একটি পূরণ করে গেছেন আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছেন আরেকটি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পূরণ করে আমাদেরকে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সভায় মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমান যে কাজগুলো করেছেন, উনার প্রত্যেকটি কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রমাণ রেখে গেছেন যে, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন। জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেন কিন্তু উনি কখনো মুক্তিযুদ্ধকে মনে-প্রাণে ধারণ করতে পারেননি। ১৯৭৫-এর পরে তার প্রত্যেকটি কর্মকান্ড ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীÑ স্বাধীনতাবিরোধী।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা নিছক একটি সরকার বদলের ঘটনা নয় অথবা একজন নেতার সাথে আরেকজন নেতার ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ঘটনা নয়, এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। এই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে খুনিরা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকরা বাংলাদেশকে ও বাংলাদেশের পক্ষকে হটিয়ে পাকিস্তানপন্থায় ঠেলে দেওয়ার একটা মহা অপচেষ্টা চালিয়েছিল। সেজন্যই তারা এই হত্যাকান্ডের পরপরই রাষ্ট্রের আত্মাকে ক্ষত-বিক্ষত করার চেষ্টা শুরু করে। তারা সংবিধান থেকে চার নীতি বাদ দেয়, তারা জয় বাংলা ধ্বনি বাদ দেয়। তারা জাতির পিতার নামকে নির্বাসনে পাঠায়, ইতিহাস বিকৃত করে এবং তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পথে ঠেলে দেয়।