নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। রবিবার বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দুই সিটির নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।
তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর, মানোয়নপত্র বাছাই ২ জানুয়ারি এবং মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএমের দায়িত্বে থাকবে সেনাবাহিনী। কোনো একটি রাজনৈতিক দলের জন্য নয়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে ইসি।
এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন হবে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে। বিভক্তির পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একসঙ্গে ভোট হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। নির্দলীয় ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণেও ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হন।
আনিসুল হকের মৃত্যুর পর বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বর্জনের মধ্যে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। উপনির্বাচনের আগে আইন সংশোধন হওয়ায় সেই নির্বাচনটি হয় দলীয় প্রতীকে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগামী বছরের মে মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে এই দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা ছিল ইসির।
এর মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভোটের তারিখ নির্ধারণে সভায় বসে নির্বাচন কমিশন। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীরকে নিয়ে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিইসি নূরুল হুদা।
তফসিল ঘোষণা করায় আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে আগাম প্রচারণামূলক সব পোস্টার-বিলবোর্ড নিজ দায়িত্বে নামিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইসি। এ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসির দুই যুগ্ম সচিবকে। উত্তরে দায়িত্ব পালন করবেন আবুল কাশেম, দক্ষিণের দায়িত্ব পেয়েছেন আব্দুল বাতেন। ঢাকা উত্তর সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় হবে বনানী কমিউনিটি সেন্টার; দক্ষিণ সিটিতে মতিঝিল কমিউনিটি সেন্টার (বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার) রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে: সিইসি
ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে সবাইকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘আপনারা ভোট দিতে আসুন। নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নেব।’
উত্তর ও দক্ষিণের মেয়ররা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবে কি না, জানতে চাইলে নূরুল হুদা বলেন, মেয়ররা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন না। তাদের পদত্যাগ করে নির্বাচন করতে হবে।
নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাদের পূর্ণাঙ্গ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন দেয়ায় তারা আদালতে যাবেন।
এ ক্ষেত্রে আইনি কোনো জটিলতায় নির্বাচন আটকে যেতে পারে কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন আটকে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ব্যক্তি কখন নির্বাচিত হলেন না হলেন সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। সিটি করপোরেশনের মেয়াদ কত দিন সেটা নির্ধারিত থাকে এ আইনে। পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকে। মেয়র বা কাউন্সিলর কখন নির্বাচিত হলেন, সেটা মুখ্য বিষয় নয়।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশন কোনো রাজনৈতিক দলকে জেতাবার জন্য কাজ করে না। নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। এ রকম চিন্তা করার অবকাশই নেই।
জামানত ও ভোটার তালিকার সিডি
ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী দক্ষিণের প্রত্যেক মেয়র প্রার্থীকে ১ লাখ টাকা জামানত রাখতে হবে। এবার প্রার্থীদের ভোটার তালিকার সিডি কেনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি ওয়ার্ডের সিডির জন্য প্রার্থীদের গুনতে হবে ৫০০ টাকা। অন্যদিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলরদের তিনটি ওয়ার্ডের সিডি কিনতে হবে ১৫০০ টাকা দিয়ে। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জামানত ভোটার অনুপাতে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে ১০ হাজার টাকার জামানতের বিধান রয়েছে।
স্বপদে থেকে ভোট নয়
দুই সিটির বর্তমান মেয়ররা ভোটে অংশ নিতে চাইলে তাদের পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। আদালতের রায়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় প্রার্থী হতে পদ ছাড়তে হচ্ছে জনপ্রতিনিধিকে।
সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, মেয়র পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে এ ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে হলে তাকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে। কাউন্সিলর পদধারীরা লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত না হওয়ায় তারা পদত্যাগ না করে প্রার্থী হতে বাধা নেই।