নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বাকিতে তেল বিক্রি না করায় পিটিয়ে মাথার খুলি ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ মাস ১১ দিন পরে ব্যবসায়ী মো. সেলিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত শুক্রবার ১৩ আগস্ট দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সেলিমের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নতুন বক্তারচর এলাকায়। পাশের মোল্লার হাট বাজারে তার সরদার ট্রেডার্স নামের জ্বালানি তেলের দোকান রয়েছে। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রানা রায়হান নামে এক কাস্টমারের কাছে সেলিম ডিজেল বিক্রির ১১ হাজার টাকা পাওনা ছিলেন। সেই টাকা না দিয়ে রানা আরও ৬৩ হাজার টাকার তেল বাকিতে নিতে চাইলে দোকানে থাকা সেলিমের ছোটভাই শরীফ ও বোনজামাই নূর মোহাম্মদ বাকিতে তেল দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৩ জুন সকাল ১০টায় রানা রায়হানের নেতৃত্বে আব্বাস আলী, হাতিম মিয়া, রবিউল্লাহ, জাহের আলী, শাহীন, সজিবসহ ১০-১২ জন লাঠিসোটা নিয়ে শরীফ ও নূর মোহাম্মদের ওপর হামলা চালায়। এসময় সেলিম খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে তার মাথার খুলি ভেঙে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েক দফা মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় খুলির অনেকটা অংশ মাথা থেকে খুলে আলাদা করে রাখেন ডাক্তাররা। সেই খুলি এনে রাখা হয় সেলিমের বাড়ির ফ্রিজে। সেলিমের স্ত্রী আকলিমা বেগম জানান, মাথার অপারেশনের পর খুলির কিছু অংশ ডাক্তাররা তাদের দেন ফ্রিজে রাখার জন্য। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, অপারেশন সফল হলে ফ্রিজে রাখা খুলির অংশ মাথায় প্রতিস্থাপন করা হবে; কিন্তু সেটি আর হলো না। গত শুক্রবার রাত ৩টার দিকে তিনি মারা যান। কথা বলার সময় আকলিমা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি বলেন, বিনা অপরাধে ওরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তিন সন্তান (দুই মেয়ে ও এক ছেলে) নিয়ে এখন আমি কীভাবে চলব। জানা গেছে, ঘটনার পর স্বামীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন আকলিমা। তার দায়ের করা মামলায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করলেও পরে তারা আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। হত্যাচেষ্টা মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন জাজিরা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. কায়সার। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, প্রথম কর্মকর্তা তদন্তে গুরুত্ব দেননি। পরে তারা এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে থানার ওসিকে জানালে তিনি তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছেন এসআই নাজমুল আলম। নিহতের মা জোহরা বেগম (৬৫) কান্নারত কন্ঠে বলেন, বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলের খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই। সরকারের কছে আমার দাবী, এভাবে আর যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয়। আর কোন সন্তান যেন বাবা হারা না হয়। এ বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে তাদের মারামারির ঘটনা ঘটে। তবে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে একটা এক্সিডেন্টের ঘটনাও ঘটে। এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এতে আসামি কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আর কয়েকজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।