নিজস্ব প্রতিবেদক
কেউবা ডাক্তার দেখাতে, আবার কেউ যাচ্ছিলেন কর্মস্থলে। কারো উদ্দেশ্যে ছিলো প্রিয়জনদের সাথে দেখা করা একটু আনন্দ ভাগাভাগি করা সব আশা যেন একমুহুর্তেই কেড়ে নিলো ভয়াবহ লঞ্চ দূর্ঘটনা। দূর্ঘটনার পর থেকে একে একে নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার হতে শুরু করে ৩৬ মরদেহ। যাদের মধ্যে ৩১ জনের বাড়িই মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এখনো সন্ধান মেলেনি একাধিক স্বজনদের তাই তাদের ভোটার আইডি বা ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। এদিকে স্বজনহারা পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। স্বজন হারিয়ে কেউ কেউ দিশেহারা হয়ে পাগলের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানতে পারছেনা এভাবে মৃত্যুর কবলে পড়তে হবে প্রিয় মানুষগুলোকে। শোকের কালো ছায়া নেমেছে শোকাহত পরিবারগুলোর মাঝে। এত মরদেহের মাঝে এখনো নিখোঁজ রয়েছে একাধিক নারী-পুরুষ কি ঘটেছে তাদের ভাগ্যে জানা নেই তাদের। উদ্ধার হওয়া পিতাঃ মরহুম শমশের আলি বেপারির ছেলে আব্দুর রহমান বেপারির (৪৫) স্ত্রী হাসিনা রহমান (৩৫), ছোট ছেলে নাইমুর রহমান সিফাতের লাশ পাওয়া গেছে। আব্দুর রহমান নিখোঁজ আছে এখনো। আব্দুর রহমান ঢাকার জজ র্কোটে মুহুরির কাজ করতো। তার আয় দিয়েই পুরো পরিবার চলতো। বর্তমানে তার দুই ছেলে হাসিবুর রহমান হাসিব (২০) ও হাফিজুর রহমান (১৫) জীবিত রয়েছেন। বড় ছেলে ইন্টার পাশ করেছে, মেজো ছেলে ক্লাস ৯ম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়তো। আব্দুর রহমান তার পরিবার নিয়ে ঢাকা কোসাইতলি ভাড়া বাসায় থাকতো। এখন আব্দুর রহমানের দুই ছেলেকে দেখার মতো কেউ নেই। স্থান- থানা টঙ্গীবাড়ী, আব্দুল্লাপুর ইউনিয়ন, মন্ডল বাড়ি। (২) মনিরুজ্জামান মনির (৪২) পিতা মৃত, হাজী আব্দুল হালিম। মনিরুজ্জামানের স্ত্রী সাদিয়া (৩০) ৮ মাসের গর্ভবতী। তার দুই সন্তান এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে-লুবাবা (১১) মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট ছেলে- ইসমাইল (৫)। মনিরুজ্জামান ঢাকার ইসলামপুরে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করতো ৮ হাজার টাকা বেতনে। তিনি প্রতিদিনই এই পথে যাতায়াত করত তার কর্মস্থলে। তিনি ৭ বছর যাবত এই চাকরি করে আসছেন। তারা ভাই বোন ১৪ জন এর মধ্যে তিনি ৭ নাম্বার। থানাঃ টঙ্গিবাড়ী, আব্দুল্লাপুর ইউনিয়ন, সলিমাবাদ হাফেজ বাড়ী। (৩) একই পরিবারের দুইজন ভাইবোন দিদার হোসেন (৪৮) ও বোন হাফেজা আক্তার রুমা (৪০)। দিদার হোসেন ঢাকার বেগম বাজারে জনতা ট্রেডার্সে চাকরি করতো। তিনি ৭ মাস হয়েছে বিয়ে করেছেন। ছোট বোন- হাফেজা আক্তার রুমার ২ বছর হয়েছে বিয়ের। রুমা গৃহিণী ছিলেন। দিদার ও রুমা ভাইবোন একসাথে ঢাকা যাচ্ছিলো। দিদার তার কর্মস্থলে যাচ্ছিলো ও ছোট বোন তার বড় বোনের স্বামী অসুস্থ তাকে দেখার জন্য যাচ্ছিল। স্থান- নৈদিঘীর পাথর, রিকাবিবাজার মিরকাদিম পৌরসভা, মুন্সীগঞ্জ সদর। ইসলাম শরিফ শিপলু (৩০) পিতাঃ জাহান শরিফ (৫০) শিপলুর স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা (২২) ও এক মেয়ে তৈয়বা (১১ মাস)। শরিফের হার্ডওয়্যারের দোকান ছিলো। তিনি তার দোকানের মাল আনার জন্য ঢাকা যাচ্ছিলেন। শরিফের দোকানের আয় দিয়ে তার ফ্যামিলি চলত। স্থান পশ্চিমপাড়া, রিকাবিবাজার মিরকাদিম পৌরসভা, মুন্সীগঞ্জ সদর। সুফিয়া বেগম (৫০) স্বামী মৃত: পরেশ বেপারি। সুফিয়া বেগম গৃহিণী ছিলেন। তিনি তার অসুস্থতার জন্য মেয়ে সুমি (৩০) কে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকা যাচ্ছিলেন। পশ্চিমপাড়া, রিকাবিবাজার মিরকাদিম পৌরসভা, মুন্সীগঞ্জ সদর। ৩৩ মরদেহের মধ্যে ৩১ জনই মুন্সীগঞ্জেরর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। ৩১ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ২০ জন, টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় ১০ জন এবং শ্রীনগর উপজেলার একজন রয়েছেন। সদরের অধিকাংশ মৃত ব্যক্তি মিরকাদিম পৌরসভা ও রামপাল ইউনিয়নের বাসিন্দা, টঙ্গীবাড়ী মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আবদুল্লাহপুর গ্রামের ৪ জন, অপরকাঠি গ্রামের ২ জন, কামাড়খাড়া গ্রামের রয়েছে ২ জন। গত সোমবার সকাল পৌনে ৮টায় মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের কাঠপট্টি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী মর্নিংবার্ড লঞ্চটি শতাধিকের উপরে যাত্রী নিয়ে সদরঘাটের ফরাশগঞ্জ এলাকার দেড় ঘন্টা পরে সোয়া ৯টার দিকে ময়ূর-২ নামের লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, কতজন যাত্রী মারা গেছেন, কতজন জীবিত ফিরেছেন এমন সঠিক তথ্য তার কাছে নেই। তবে যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে সরকারিভাবে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় সেটা করা হবে। লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নেওয়া হলে এবং ফিটনেস ঠিক না থাকলে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দূর্ঘটনার পর থেকে একে একে নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার হতে শুরু করে ৩৬ মরদেহ
আগের পোস্ট