নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারখানার ভেতর থেকে ৪৯টি পোড়া মরদেহ বের করে আনা হয়েছে। মরদেহগুলো ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে, এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার অগ্নিদগ্ধ তিনজন হাসপাতালে মারা যান। এ নিয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫২ জনে। এছাড়া আহত হন আরও অন্তত ৫০ জন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় আগুন লাগলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল পৌনে ৬টা) নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে মূল আগুন দুপুর সাড়ে ১২টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর দেবাশীষ বর্ধন। পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার আগ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অগ্নিকান্ডের সময় ভবনটিতে আনুমানিক কতজন মানুষ ছিলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ভবনটিতে কতজন ছিলেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করে পরে বিষয়টি জানানো হবে। তবে বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর ২৫ জনকে জীবিত অবস্থায় ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল ভোরের দিকে, আবারো বেড়ে যায় আগুন। আমরা কাজ করছি। মরদেহের সংখ্যা পরে জানানো হবে। তিনি আরো বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। কারখানার পুরোটাই পুড়ে গেছে। আগুনের সূত্রপাত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করে। সাত তলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচ তলার একটি ফ্লোরের কার্টন থেকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় কালো ধোঁয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করে। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন।
দীর্ঘ সময়ে আগুনে পুড়ে নিহতদের দেহের শুধুমাত্র হাড় ও কঙ্কাল ছাড়া বাকি সব পুড়ে গেছে। মরদেহগুলোর ছিল শুধু হাড়। মরদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে আঁতকে উঠেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অনেকে কেঁদেছেন এ মরদেহ দেখে। তবে কারখানার ভেতর থেকেই মরদেহগুলো ব্যাগে করে বের করা হয়। বাইরেও কাউকে দেখতে দেয়া হয়নি মরদেহের এ চিত্র।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, ইতোমধ্যে ৪৯টি মরদেহ ফায়ার সার্ভিসের ৫টি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরিচয় শনাক্তের পর মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তুপ থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে। আমাদের প্রথম কাজটি হবে মরদেহগুলোর যথাযথ প্রক্রিয়ায় ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা। সবগুলো মরদেহ আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে। প্রয়োজনে তাদের মরদেহ ফ্রিজিং করা হবে। আত্মীয়দের সঙ্গে ডিএনএ স্যাম্পল মিলিয়ে পরবর্তীতে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডেমরা, কাঞ্চনসহ ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগুন লাগার পর অনেকেই ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে বাঁচার চেষ্টা করে গুরুতর আহত হন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালের পাশাপাশি ঢাকা মেডিক্যালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও বিক্ষিপ্তভাবে ভবনের কিছু কিছু স্থানে আগুন জ্বলে উঠছে। পুরো আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ করছে। আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে আসলেও ৬ তলায় আগুন এখনো নেভেনি।