মহা আয়োজন! বিকেল থেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদের পূর্ব অংশে অসংখ্য মানুষ। আশপাশ থেকে নানা শ্রেণির মানুষ এসে জড়ো হন ইফতারের জন্য। এসেছেন ঢাকার বাইরে থেকেও। রাস্তার মুসাফির থেকে শুরু করে সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও শামিল এখানে।
ছয়-সাতজনের একেকটি দল বৃত্তাকারে বসে আছে। ইফতারের সময় যত এগিয়ে আসে, বৃত্তের সংখ্যা আর রোজাদারের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে, আর সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতা। দোয়া-দরুদ পড়ছেন সবাই। অপেক্ষা ইফতারের সময়ের জন্য। মসজিদের খাদেম, ফাউন্ডেশনের কর্মী, কর্মকর্তা এবং বায়তুল মোকাররম মার্কেটে সমিতির প্রতিনিধিরা ইফতারি বিলি-বণ্টন করছেন।
গতকাল শুক্রবার পবিত্র রমজানের প্রথম দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দেখা গেল এমন চিত্র। তিন হাজারের বেশি মানুষ গতকাল এখানে ইফতার করেছেন। সন্ধ্যায় ধনী-গরিবের ব্যবধান ঘুচে যায় এখানে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে পাশাপাশি বসে ইফতার করেন।
বায়তুল মোকাররম এলাকায় এক দশক ধরে ধনী-গরিব সবার জন্য ইফতারের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত।
আয়োজন সাধারণ। শরবত, মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজি, খেজুর, জিলাপি, কলা আর শসা। সারা দিন রোজা রাখার পর মাগরিবের আজানের মুহূর্তে এখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদের দেয়ালটি ভেঙে যায়।
বাসাবোর বাসিন্দা জসিম উদ্দিন দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এখানে ইফতার করেছেন। জানা গেল, এবারই প্রথম বায়তুল মোকাররমে ইফতার করতে এসেছেন। গতকাল জুমার নামাজ পড়ে তিনি আর বাসায় না গিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে আশপাশের এলাকায় ঘুরেছেন। আসরের নামাজের পর এখানে বসে গেছেন। মুন্সিগঞ্জ থেকে এসেছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। বললেন, ‘প্রতিবছরই অন্তত একবার হলেও বায়তুল মোকাররমে আসি ইফতার করতে। এবার প্রথম দিনই চলে আসলাম। কেননা আজ শুক্রবার।’
মসজিদের পূর্ব অংশে হাজারো মুসল্লি সারি বেঁধে ইফতারের জন্য বসেছেন। পাশের অস্থায়ী মঞ্চে চলছে ইফতার-পূর্ব কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত পাঠ। এদিন রমজানে মাসআলা মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করেন মুফতি মাওলানা ওয়ালীয়ুর রহমান খান।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (মসজিদ ও মার্কেট) মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে আমরা ইফতারের আয়োজন করছি। তাতে দেড় থেকে দুই হাজার মুসল্লির ইফতারের সংকুলান হয়। প্রথম দিন তুলনামূলকভাবে একটু কম হয়। কিন্তু এ বছর প্রথম দিনেই তিন হাজারের বেশি মানুষ এসেছেন।’ তিনি আরও বলেন, এ বছর ২৬ লাখ টাকার বাজেট করা হয়েছে ইফতারের জন্য। তবে লোকসমাগম বেশি হলে পরিস্থিতি বুঝে বাজেট বাড়ানো হবে।
মূল আয়োজনের পাশাপাশি খণ্ড খণ্ড ইফতারের আয়োজন দেখা গেছে। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-তিন প্রান্তেই মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত চলতে থাকে এ প্রস্তুতি। কোথাও তাবলিগ জামাতের আয়োজন, কোথাও স্থায়ী ব্যবসায়ী বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলছে ইফতার। মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে দেখা গেল, মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলা চলছে। কাছাকাছি আরেক জায়গায় দেখা গেল ইসলামি ক্যালিগ্রাফি, পুস্তক ও নবী করিম (সা.)-এর জীবনীভিত্তিক পোস্টার প্রদর্শনী।