আতঙ্কিত জেলাবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত সংখ্যা ঢাকায়। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মুন্সীগঞ্জের পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ। মুন্সীগঞ্জের বিপুল পরিমান ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবিদের অবস্থান নারায়ণগঞ্জে। ইতিমধ্যে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলা শহর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। চলছে না কোন গণপরিবহন। ঢাকা থেকেও পন্যবাহী ট্রাক, ওষুধবাহী গাড়ী ছাড়া কোন ধরনের পরিবহনই ঢুকছেনা মুন্সীগঞ্জে। মুক্তারপুর সেতুর দু’পাড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোষ্ট। তারপরও নানা কৌশল অবলম্বন করে ভোরে এবং গভীর রাতে মুক্তারপুর সেতু দিয়ে পায়ে হেঁটে এবং পঞ্চবট্টী দিয়ে ট্রলার যোগে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের লোকজন মুন্সীগঞ্জের আশপাশের এলাকায় প্রবেশ করছে। যেহেতু নারায়ণগঞ্জ জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। সেহেতু পার্শ্ববর্তী জেলা হিসাবে মুন্সীগঞ্জবাসীকে এখনই সতর্ক এবং সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে জানান সচেতন মহল। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যথায় এজন্য মুন্সীগঞ্জ জেলাবাসীকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সরেজমিনে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের ওপার থেকে ট্রলারযোগে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ, শিশু বৃদ্ধরা পার হয়ে মুক্তারপুর হয়ে শহরে ঢুকছে। মুক্তারপুর সেতুতেও দেখা গেছে হেঁটে চলা মানুষের পদচারণা। মুক্তারপুর ব্রিজের দু’পাশে চেকপোষ্ট থাকায় প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা লোকজন ব্রিজের ওই পারে থাকা আন্ডার পাস সিঁড়ি দিয়ে ব্রিজের মাঝখানে উঠে পড়ে। তারপর নদীর সীমানাটা পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে ব্রিজের দক্ষিণ পাশে থাকা আরেকটি আন্ডার পাস সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে পড়ে।
অন্যদিকে ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মোল্লারচর, নয়াগাঁও, মালিরপাথর, মিরকাদিম এলাকায় গভীর রাতে ট্রলারযোগে নদী পাড়ি দিয়ে আসে লোকজন। গতকাল গভীর রাতে ট্রলারযোগে নারায়ণগঞ্জ থেকে সপরিবারে পালিয়ে আসে মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলের চরকেওয়ার ইউনিয়নের ছোট মোল্লাকান্দি গ্রামের নাদিম খাঁন। পরে সকাল বেলা গ্রামের লোকজন তাদের গ্রামে আসার খবরে আতঙ্কিত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে প্রশাসনকে স্থানীয়রা জানালে সেখান থেকেও তারা মুন্সীগঞ্জ শহরে পালিয়ে আসে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবারটি মানিকপুরে তাদের আরেকটি ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। তবে কোন বাড়ীতে অবস্থান করছে সেটা খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও পালিয়ে আসা লোকগুলো পালিয়ে এসেও তাদের প্রকৃত ঠিকানায় না থেকে আত্নগোপনে থাকে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি তারা যদি সুস্থ হতো তাহলে এভাবে পালিয়ে বেড়াতো না। বাড়ীতেই হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে থাকতো। জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, পালিয়ে আসলেই যে করোনা রোগী এটা নিশ্চিত করে বলা যাবেনা। তবে যারাই বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে স্থান ত্যাগ করে আসবে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাটা জরুরি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন পিপিএম বলেন, মুক্তারপুর সেতুতে চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি নৌ পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে যেন পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে কোন লোকজন মুন্সীগঞ্জ শহরে প্রবেশ করতে না পারে। পুরো জেলা শহরে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে। অকারণে দিনে রাতে রাস্তায় বের হলেই আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।