নিজস্ব প্রতিবেদক
ট্রান্সশিপমেন্টের প্রথম ট্রায়াল রানের পণ্য নিয়ে আজ কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে জাহাজ ‘এমভি সেজুঁতি’। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনের ‘ট্রায়াল রান’ শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) থেকে। আজ কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে কনটেইনার নিয়ে যাত্রা শুরু করবে ‘এমভি সেঁজুতি’। আশা করা হচ্ছে, জাহাজটি আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে। দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের উন্নয়নে মালামাল পরিবহনের জন্য করা ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার শুরু হচ্ছে। ‘এমভি সেঁজুতি’ নামে একটি জাহাজ ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলকাতায় পৌঁছেছে। এটি গত শনিবার (১১ জুলাই) কলকাতার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়। আজ জাহাজটি ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। ১৬ জুলাই এটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে।” বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘এমভি সেঁজুতি’ প্রথম ট্রায়াল রানে চারটি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। নিয়ম অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বন্দর চার্জ আদায় করবে। এর বাইরে রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক, সড়ক ব্যবহার ও নিরাপত্তার জন্য যেসব মাশুল নির্ধারিত আছে, সেগুলোও আদায় করা হবে। জানা গেছে, ভারত তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করবে। এই রুটটি নিয়মিত করতে ট্রায়ালের অংশ হিসেবে এবারের এই ট্রান্সশিপমেন্ট। জাহাজটি ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছলে জাহাজের মালামাল কুমিল্লার বিবিরবাজার অথবা আখাউড়ার সড়ক পথ দিয়ে ভারতের আগরতলায় পৌঁছবে। ট্রায়াল রানে কী কী সমস্যা হয় সেগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের পর নিয়মিত রুট চালু হবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলকাতা বন্দরে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে হংকংভিত্তিক গোল্ড স্টার শিপিং লাইন। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, ‘কলকাতা থেকে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নির্ধারিত ট্রান্সশিপমেন্ট ফি আদায়ের পর কনটেইনারগুলো কাস্টমসের অধীনে এসকর্ট দিয়ে আখাউড়া বিবিরবাজার পৌঁছে দেয়া হবে। ভারতের পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের মাশুল আদায় করবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রসেসিং মাশুল, ট্রান্সশিপমেন্ট মাশুল, নিরাপত্তা মাশুল, এসকর্ট মাশুল, প্রশাসনিক মাশুল, স্ক্যানিং ও ইলেকট্রিক সিলের মাশুল।’
চট্টগ্রাম-কলকাতা কনটেইনার জাহাজ চলাচল শুরু
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনের শুরুর মাঝেই দু’দেশের মধ্যে সমুদ্রপথে কনটেইনারে পণ্যবাহী জাহাজ সার্ভিসও চালু হয়েছে সম্প্রতি। এতে ৩০ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলকাতা বন্দরে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে। হংকংভিত্তিক গোল্ড স্টার শিপিং লাইন ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক জাহাজ পরিচালনাকারী এক্সপ্রেস ফিডার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলকাতা বন্দরে জাহাজে পণ্য পরিবহন শুরুর চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। জানা গেছে, এতদিন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যভর্তি কনটেইনার চট্টগ্রাম আনতে গেলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাঙ এবং শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর হয়ে দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে আসতে হতো। এতে সময় লাগত ১৩ দিন এবং খরচও প্রচুর হতো। ফলে কলকাতা থেকে সমুদ্রপথে পণ্য আনতে কেউ উৎসাহিত হতো না। বর্তমানে সড়কপথে এই দূরত্বে পৌঁছতেও কমপক্ষে ১৭ দিন সময় লাগত। নতুন এই উদ্যোগের ফলে বিপুল সময় সাশ্রয় ও পণ্য পরিবহন খরচ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক্সপ্রেস ফিডারের একটি কনটেইনার জাহাজ পণ্য নিয়ে আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে ‘এমভি এশিয়াটিক মুন’ নামে একটি জাহাজ ২৯৪ একক কনটেইনার নিয়ে কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। বৃহস্পতিবার ৪৭৫ একক কনটেইনার নিয়ে কলকাতা বন্দরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে। প্রতি মাসে তিনটি জাহাজ দিয়ে তারা সরাসরি কনটেইনার পরিবহনের সার্ভিস চালু রাখবে বলে জানিয়েছে হংকংভিত্তিক গোল্ড স্টার শিপিং লাইনের এ দেশীয় শিপিং এজেন্ট ‘ট্রাইডেন্ট শিপিং’।