নিজস্ব প্রতিবেদক
মামলা ছাড়াই একজন আইনজীবীকে ১৮ ঘন্টা থানার গারদে থাকতে হয়েছে। ১৮ ঘন্টা গারদে থেকে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। জেলা আইনজীবী সমিতির (মুন্সীগঞ্জ বারের) সদস্যকে বিনা এজাহারে ১৮ ঘন্টা থানার গারদে থাকতে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আলোচনার ঝড় বইছে। এমনই এক ঘটনার জন্ম দিয়েছে গজারিয়া থানা পুলিশ।
এডভোকেটকে ১৮ ঘন্টা থানা হাজতে রেখে অবশেষে ছেড়ে দিলেন পুলিশ। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এডভোকেট জহিরুল ইসলাম কাননকে গত রোববার সন্ধ্যায় বৃদ্ধকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগে বাড়ি থেকে থানায় ডেকে আটক করা হয়। আহত হযরত আলীর স্ত্রী ফিরোজা বেগম গজারিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ প্রদান করে। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরে থানা থেকে এস. আই মইনুল ইসলাম এডভোকেট কাননকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসেন। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার পরে থানা থেকে তাকে পুনরায় ছেড়ে দেয়া হয়।
ফিরোজা বেগমের মেয়ের জামাই রিপন জানান, এডভোকেট কাননের বড় ভাই আরিফের দুটি গরু আমার শ্বশুরের ধান ক্ষেতে ছেড়ে দিয়ে ক্ষতি সাধন করে প্রায়ই। কয়েকদিন যাবৎ বিষয়টি তাদেরকে জানিয়ে আসলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। পরবর্তীতে গত রোববার পুনরায় গরু ছেড়ে ধান ক্ষেত নষ্ট করছিল। আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি গরু দুটিকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসছিল। এই খবর পেয়ে এডভোকেট কানন সাহেবসহ আরো লোকজন এসে আমার শ্বশুরের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করলে মাথা ফেটে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় আমার শ্বশুরকে গজারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সিটি স্ক্যান করার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। আমার শাশুড়ি থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে। পুলিশ গিয়ে এডভোকেট কানন সাহেবকে বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। স্থানীয় মেম্বার সালাউদ্দিন সিকদারের পরামর্শে মীমাংসার জন্য থানায় মামলা করা হয়নি। পরবর্তীতে আপোষ মীমাংসার কথা বলে এডভোকেট সাহেবকে থানা থেকে পুলিশ ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে এডভোকেট জহিরুল ইসলাম কানন বলেন, আমাদের গরু তাদের ধান ক্ষেতে প্রবেশ করে ক্ষতি সাধন করেছে বলে গরু দুইটিকে তারা ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। গরুর শরীরে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে গরু দৌড় দেয়। সেই দৌড়ে হযরত আলী গাছের সাথে আঘাত লেগে গুরুতর আহত হয়। আমরাসহ উপস্থিত সকলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাই। এই মর্মে হযরত আলীর স্ত্রী ফিরোজা বেগম থানায় অভিযোগ করলে আমাকে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে যায়। আমাকে শুধু শুধু ১৮ ঘন্টা থানার গারদে আটকিয়ে রাখে। আজ (সোমবার) দুপুরে আমাকে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে গজারিয়া থানার এই অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই মাইনুল ইসলাম জানান, লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরেই ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পরেই এডভোকেট জহিরুল ইসলাম কাননকে রোববার সন্ধ্যায় আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি। উভয়পক্ষ মামলা এজহারভুক্ত না করে আপোষ মীমাংসা করলে উভয়পক্ষের সম্মতিতে আসামী এডভোকেট জহিরুল ইসলাম কাননকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে গজারিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মামুন আল রশিদ জানান, মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে এডভোকেট কাননকে আটক করে আনা হয়েছিল। উভয়পক্ষের আপোষ মীমাংসার ফলে মামলা না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।