মুন্সীগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালকসহ ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব, সদস্যসহ ২১ জন করোনায় আক্রান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ করোনা ভাইরাস আতঙ্কে পুরো দেশ। সরকারি ও বেসরকারী অফিস খুললেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ। সকলে আজ নিজেকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী। ঠিক এমন এক মুহূর্তে মানবতার সেবায় প্রশাসন, স্বাস্থ্যবিভাগ ও পুলিশ বিভাগের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও কর্মচারীগণ। মুন্সীগঞ্জ জেলায় উপ পরিচালক স্থানীয় সরকারের নির্দেশনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবেলায় ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্যবৃন্দ, ইউপি সচিব, হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা, গ্রাম পুলিশসহ করোনা মোকাবেলা কমিটির সদস্যরা দিন রাত পুরো ইউনিয়ন ঘুরে ঘুরে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহ, জনগণকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা, চায়ের স্টল বন্ধ, মাইকিং, ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন তালিকা প্রস্তুতকরণসহ বহু কাজ করে যাচ্ছে চলতি বছরের মার্চ এর প্রথম থেকে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আজিজুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা। পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হন মোঃ মোতালেব মাদবর, ইউপি সদস্য ১নং ওয়ার্ড, বালুচর ইউপি, সিরাজদিখান ও মোঃ গোলাম মওলা, ইউপি সদস্য ৭নং ওয়ার্ড, পঞ্চসার ইউপি। মুন্সীগঞ্জ জেলায় যখন দেশের অভ্যন্তর হতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়। তখন ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও কর্মচারীগণ নিজেদের পরিবারের মায়া বিসর্জন দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা এমনকি রাত অবধি অরক্ষিত অবস্থায় লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষের ত্রাণের তালিকা প্রস্তুতকরণ, ত্রাণ বিতরণসহ সরকারি আদেশ মোতাবেক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে আগত প্রবাসী এবং দেশের অভ্যন্তরে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগতদের নামের তালিকা প্রতিদিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ ও তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতসহ যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করে। পরিবর্তিত সময়ের পেক্ষাপটে কাজের মাত্রা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি বৃদ্ধি পায় স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা, ইউপি জনপ্রতিনিধি ও কর্মচারিদের আক্রান্তের হার। এ সময়ে একে একে আক্রান্ত হন স্থানীয় সরকারের মূল চালক মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক (উপসচিব) এস. এম. শফিক, গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুজ্জামান ও ইমামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ খাঁন, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সোহরাব হোসেন পীর ও লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আমির হোসেন তালুকদার, বাংলাদেশ সচিব সমিতি (বাপসার) সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম, সচিব, পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদসহ আরো অনেকে। এর মধ্যে অনেকেই করোনা জয় করেছেন। বর্তমানে স্থানীয় সরকার উপ পরিচালক, মুন্সীগঞ্জসহ ইউপি চেয়ারম্যান পাঁচজন, মেম্বার ৯ জন, ২ জন ইউপি সচিব, ১ জন হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর, ১ জন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ও ১ জন গ্রাম পুলিশসহ মোট ২০ জন আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের ১ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক স্থানীয় সরকার, মুন্সীগঞ্জ (উপসচিব) এস.এম.শফিক নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়ে জনগণকে এ ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোন স্থান কাল পাত্র ভেদাভেদ নেই। বিন্দু পরিমান অসচেতনতা, অসতর্কতা ব্যক্তি জীবনে সংক্রমিতের মত ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখী দাঁড় করাতে পারে। ইতোমধ্যে অবুঝ শিশু ব্যতীত করোনা সংক্রমিতের ক্ষেত্রে ‘উপসর্গ’ সম্বন্ধে সমাজে বিদ্যমান প্রতিটি মানুষই কম-বেশী জ্ঞাত। তিনি আক্রান্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাৎক্ষণিক উল্লেখিত উপসর্গ ধরা পড়ে না। তাই সংক্রমণে জীবাণু বহনকারীর মাধ্যমে ইতোমধ্যেই পরিবার-পরিজনসহ সান্নিধ্যে আসা যে কেউই সংক্রমিত হতে পারেন। তিনি করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা সম্বন্ধে বলেন, সারা বিশ্ব অসহায় দৃষ্টিতে অবলোকন করেছে এর প্রতিপত্তি। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে সমধিক পরিচিত ইউরোপ-আমেরিকা এর জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধনে তারা পৃথিবীতে রোল মডেল। অথচ সম্ভাব্য পরমাণুসম একটি ভাইরাস ২ শতাধিক রাষ্ট্রকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে। করোনা সংক্রমিতে সর্বাপেক্ষা মৃত্যু এবং সর্বোচ্চ সংক্রমণের তান্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছে মহা পরাক্রমশালী রাষ্ট্র আমেরিকা। তিনি বলেন, প্রাণহানীর সর্বমোটের প্রায় এক চতুর্থাংশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র ব্রাজিল ও ইউরোপিয়ান কমিউনিটিভুক্ত দেশ পরাশক্তির ইতালী। তিনি আরো জানান, এই দেশসমূহে মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হওয়া প্রবাসী বাঙ্গালীর সংখ্যাও কম নয়। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে প্রায় ৫শ বাঙ্গালীর প্রাণহানী অত্যন্ত দুঃখজনক। এই অবস্থায় তিনি বাংলাদেশে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি এবং পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় সরকারের আরো জোরালো ভূমিকা রাখার উপর দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন। তিনি সকল জনপ্রতিনিধিদের বেশি বেশি মানবিক সাহায্য প্রদান করার আহ্বান জানান। তিনি স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি ও কর্মচারীদের নিজেদের সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থান বজায় রেখে জনগণকে সকল সহযোগিতা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করেন।