ক্রেতারা বলছে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করে পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
পেঁয়াজের ঝাঁঝে বাজারে ভোক্তাদের হিসাব এখনও গরমিল। কি কিনতে কি কিনবে, তা নিয়ে টানাটানি। মুদির দোকানের সওদা শেষে কাঁচাবাজারেও যেন রেহাই নেই ভোক্তার। ৫০ থেকে ১০০ টাকা কিলোর দরদাম। সবজির বাজারের এমন ঊর্ধ্বমুখী আচরণে দৈনিক বাজারের বাজেটে চিড়েচ্যাপ্টা ক্রেতা। পেঁয়াজের বাজারের ঝাঁঝ যখন চরমে উঠতে শুরু করেছিল তখন সরকার অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর উদ্যোগে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রিও স্বস্তি দিয়েছে ক্রেতাদের। কিন্তু সবজির বাজারের স্বস্তি মিলবে কিসে? প্রশ্ন ক্রেতার। তারা বলছেন, বাজারে নিত্যনতুন সবজি আসছে। কিন্তু দাম আশাকচুম্বি। সিংহভাগ সবজির কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। আর শাক জাতীয় সবজির দামও আঁটি প্রতি ২০ থেকে ৩৫ টাকা। ঊর্ধ্বমুখী সবজির দাম। কোনো কোনো সবজির দাম ১০০ টাকার বেশি। প্রতিনিয়তই খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচাবাজারে বর্তমানে সবজির দাম সবচেয়ে বেশি। ১০০ টাকার নিচে হাতেগোনা কয়েকটি সবজি পাওয়া যায়। বেশিরভাগ সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও যেখানে আলুর কেজি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা, এখন সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আদা আড়াইশ গ্রাম ৪৭ টাকা, গাজর ১১৫ টাকা কেজি, বাঁধাকপি ৪০ টাকা পিস, শসা ৬০ টাকা কেজি, লাউ পিস ৬০ টাকা, কাঁচাকলা হালি ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স কেজি ৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, পটল ৮০ টাকা কেজি। তবে বিক্রেতাদের বক্তব্য সাদাসিধে। তারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেশি তাই এখানেও দাম বেশি। কাঁচাবাজারের বিক্রেতা বাতেন জানান, যেসব সবজির দাম বেশি সেগুলোর বেশিরভাগ শীতের সবজি। সেজন্য দাম বেশি। তিনি বলেন, বাজারে যখন শীতের সবজি সরবরাহ বাড়বে তখন এসব কিছুর দাম কমে যাবে। তিনি বলেন, শীতের সবজি ছাড়াও পেঁপে, বেগুন, করলাসহ বেশকিছু সবজির দাম বেড়েছে। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, আলু ৪০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৫০ টাকা কেজি, পেঁপে ৫০ টাকা পিস, টমেটো ১১০ টাকা কেজি, শিম ১৬০ টাকা কেজি, মিষ্টিকুমড়া ফালি ৩৫ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা কেজি, করলা ১০০ টাকা কেজি, বরবটি ৮০ টাকা কেজি, ধুন্দল ৮০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা কেজি, পটল ৮০ টাকা কেজি, লাউ পিস ৫০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ টাকা পিস (মাঝারি)। একই সঙ্গে ধনেপাতা ২৫০ টাকা কেজি, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি। সবজির দামের এমন অবস্থায় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাড়া-মহল্লার বাজারে যে সবজির দাম ১০০ টাকা, সেটি এখানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। মুন্সীগঞ্জ কোর্ট এলাকায় সবজি বিক্রেতা বাতেন জানান, এখানে যে সবজির দাম ৮০ টাকা সেটি পাড়া-মহল্লার বাজারে বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে অনেক সময় পাইকারি বাজারে কোনো পণ্যের দাম ১০ টাকা বাড়লে খুচরা বাজারে দাম আরও বেশি বাড়ে। মূলত এজন্যই দাম বেশি হয়ে থাকে। মুন্সীগঞ্জ সদরেই নয় পুরো জেলা জুড়ে একই অবস্থা। ক্রেতারা বলছে, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করে পণ্যের দাম ক্রেতার সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) গজারিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি এস এম নাসির উদ্দিন জানান, সবজি তো বিক্রেতারা মজুত করতে পারবে না। বরং প্রতিদিন তাদের কাছে যে সবজি আসে সেটা বিক্রি করতেই হবে। এক্ষেত্রে দাম বেশি হলে ধরে নিতে হবে বাজারে সবজির যে চাহিদা তার তুলনায় জোগান কম। মূলত এজন্যই সবজির দাম বেশি। তারপরও পাইকারি ও খুচরা বাজারের পার্থক্য যাতে অস্বাভাবিক না হয় সেটা নিয়ে বাজার মনিটরিং হতে পারে। তিনি বলেন, আলুর কেজি কেন এত বেশি সেটিও দেখা উচিত। মুন্সীগঞ্জে প্রচুর আলুর উৎপাদন হয়। তারপরও দাম কেন হঠাৎ বেড়েছে তা অনুসন্ধান করা উচিত।