নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ। এই জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। বর্তমানে আলুর বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক আলুচাষে আবার আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ উপজেলায় ৮ হাজার ৭’শ ২৫ হেক্টর আবাদি জমিতে আলু, সরিষা, বাদামসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। এদিকে প্রান্তিক চাষিরা খুব চিন্তিত। আবাদ শুরু হলেও বর্ষার পানি না নামায় সময়মত আলুসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ করতে পারছে না। উঁচু জমিতে আগাম স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু হলেও জমিতে বর্ষার পানি থাকায় স্বাভাবিক চাষ বিলম্বিত হচ্ছে।
লৌহজং উপজেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বর্ষার পানি আটকে আছে। কোনভাবেই জমির পানি যেন নিষ্কাশন হচ্ছেই না। এতে ফসল আবাদে কৃষকেরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
চাষীদের অভিযোগ, জমি সংলগ্ন খালগুলো দখল আর বালু জমে খালগুলো সরু হয়ে গেছে। এতে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলি জমিতে জমে আছে বর্ষার পানি। তাই এ বছর আলু চাষের বিড়ম্বনা ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা তাদের।
প্রান্তিক কৃষকেরা জানান, বর্ষার পানি জমি থেকে দেরিতে নামায় শীতকালীন ফসলের আবাদ করা যাচ্ছেন না। এছাড়া এবছর আলু চাষ ২ মাস দেরিতে শুরু হবে এবং সময়ের ২ মাস পরে আলু উত্তোলন হবে। এসময় বৃষ্টির মৌসুম চলে আসবে। তাতে বৃষ্টিতে আলু নষ্ট হবার শঙ্কা থাকবে। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গাঁওদিয়া ইউনিয়নের বনসেমন্ত গ্রামের আলু চাষি লতিফ শেখ জানান, খাল দখলের কারণে আগের মত ফসলের আবাদ করতে না পারায় আমরা কৃষকরা এখন মরতে বসছি। এই বিলে বর্ষার পানি নিষ্কাশনের ২টি খাল। একটি হলো নুরপুরের খাল যা কালুরগাঁও হয়ে গাঁওদিয়ার বিলে গেছে, আরেকটা হলো বনসেমন্ত খাল। এই দুইটা খাল মাটি ভরাট করে দখল হয়ে গেছে। খালটি পুনরায় খনন করলে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা আর থাকবে না।
আলুচাষী সজিব হোসেন জানান, বর্ষার পানি আটকে থাকার কারণে এবার আলুচাষে দুই মাস দেরি হয়ে যাবে।
বর্ষার পানি নামতে না পারার কারণে খিদিরপাড়া, ঘোলতলী, ধারার হাট, গাঁওদিয়া, বেজগাঁও, কনকসারসহ ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামের বিলে জমিতে এখনো পানি আটকে আছে।
স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের টানা বৃষ্টির প্রভাবে জমি থেকে বর্ষার পানি না নামার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন খাল-বিল, সেতু-কালভার্টের মুখ আটকিয়ে মাটি ভরাটের কারণেই এই অঞ্চলের ফসলী জমিগুলো দিনদিন হুমকির মুখে পড়ছে। আবার অনেক খাল উধাও হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শরীফুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ৮ হাজার ৭’শ ২৫ হেক্টর জমিতে আবাদি জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। চলতি আলু মৌসুমে ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিকটন।
এ ব্যাপারে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আওয়াল জানান, এ বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলার যে প্রধান প্রধান খালগুলো আছে যেসব খালগুলোতে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না মুখগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এই খালের মুখগুলো খনন করা হবে। এ বিষয়ে আমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছি তারা মাপঝোক করছে। আশা করি, ১/২ সপ্তাহের মধ্যে খালের মুখ কাটার কাজ শুরু হবে। বড় বড় খালগুলো যেমন- বাসুদিয়া, বনসেমন্ত, কনকসার, ঘোড়দৌড় বাজারের খাল। এসব বড় খালের মুখ স্থানীয়ভাবে বরাদ্দ দিয়ে খনন করা হবে। আমাদের এমপি মহোদয় কিছু বরাদ্দ দিতে চেয়েছেন। এছাড়া আমরা স্থানীয় বরাদ্দ দিয়ে এসব খাল খনন করবো। এছাড়াও নদীর সাথে বড় খালগুলোও খনন করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা একটি চাহিদা পাঠিয়েছি। আগামী ১ বছরের মধ্যে এ উপজেলায় সব মিলে ৩০ কিলোমিটার খাল খনন করা হবে এবং যেসব খাল অবৈধ দখল করেছে ম্যাপ দেখে দখল হওয়া খালগুলো উদ্ধার করা হবে।