নিজস্ব প্রতিবেদক
লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ভ্যাকসিন টিকা নিতে আসা লোকজনের হট্টগোল এবং টিকা প্রদানকারী ৪ জন নার্স ও একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় দুপুর আড়াইটায়। এ অবস্থায় করোনা ভ্যাকসিন প্রদানে শৃঙ্খলা ও সামাজিক দূরত্ব কোনটাই রক্ষা হচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নুরুল আলম খান জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকা দেয়ার বিষয়টি প্রচার হওয়ায় এবং কোনরকম রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই টিকা দেয়া যাবে এমন খবরে মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় গত দু’দিন ধরে লৌহজং সদর হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন নিতে আসা লোকেরা উপচেপড়া ভীড় জমাচ্ছে। তিনি জানান, গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে হাসপাতালের প্রধান ফটকে উপচেপড়া ভীড় দেখতে পেয়ে লৌহজং থানায় ফোন দেয়া হয় নিরাপত্তার জন্য। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কয়েকগুণ টিকা গ্রহণকারী লোকজন হাসপাতালে ভীড় জমায়। বেলা সাড়ে ১২টায় লোকজনের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজারে যা সামাল দেয়া মোটেও সম্ভব নয়। হাসপাতালের দুটি রুমে ৪ জন নার্স টিকা প্রদান করছেন এবং কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী তাদের সহযোগিতায় এনআইডি কার্ড ও রেজিষ্ট্রেশন কাগজ সিরিয়াল করছে। এ পরিস্থিতিতে লোকের বাড়তি চাপের কারণে শত শত লোক টিকা প্রদান রুমে প্রবেশ করলে অবস্থা বেগতিক দেখে সিনিয়র স্বাস্থ্যকর্মী মো. মিজানুর রহমান নার্সদের নিয়ে একটি রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলে সৃষ্টি হয় হট্টগোলের। এসময় টিকা নিতে আসা লোকজন দরজা খুলতে এবং ভাঙ্গতে সজোরে আঘাত করে দরজায় এবং তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ খবর হাসপাতালে থাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল আমিন শুনতে পেয়ে তার রুমে থাকা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিনা ইসলামকে নিয়ে পরিবেশ শান্ত করতে নিচে নেমে এলে তারাও অবরুদ্ধ হয়ে যায়। এরপর খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কাউসার হামিদ ও বেজগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আমির হোসেন তালুকদার ঘটনাস্থলে আসেন। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হুমায়ুন কবীরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তখন ইউএনও মো. হুমায়ুন কবীর, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ শিকদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিবেশ শান্ত করেন বেলা আড়াইটায়। অবশেষে হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, বয়স্ক লোক ও নারীদের টিকা প্রদান করা হয় এবং যাদের মোবাইলে ম্যাসেজ এখনো আসেনি এমন সব লোকজনকে ম্যাসেজ পেয়ে আসতে বলা হয়। সরেজমিনে গতকাল রোববার লৌহজং সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে টিকা নেয়ার জন্য। সেখানে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। টিকা প্রার্থীদের উপচেপড়া ভীড়। সামাজিক দূরত্ব মানছেনা কেউ। কক্ষের ভিতরে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে টিকাপ্রার্থী নারী-পুরুষ। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নুরুল আলম খান আরও জানান, লৌহজংয়ে মাত্র আট হাজার টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত শনিবার ১০টি ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার টিকা প্রদান করা হয়েছে। বাকি দুই হাজার টিকার মধ্যে প্রায় এক হাজার টিকা গত শনিবার হাসপাতালে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে লৌহজংয়ে টিকার জন্য প্রায় ১৮ হাজার রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে।