নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মেদিনীমন্ডল আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক আবু নাছের লিমনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ঝুমুরের লাশ মৃত্যুর সাড়ে ৫ মাস পর কবর থেকে উঠানো হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে মাওয়া চৌরাস্তা সংলগ্ন পশ্চিম কুমারভোগ কবরস্থান হতে মুন্সীগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইলিয়াস শিকদারের উপস্থিতিতে পুলিশ কবর হতে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এর পূর্বে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে শিক্ষক আবু নাছের লিমনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। মামলায় অপর আসামী করা হয়েছে শিক্ষক লিমনের পরকীয়া প্রেমিকা দিলরুবা আক্তারকে। মামলার পর হতে শিক্ষক লিমন পলাতক রয়েছে। লিমন একটি জাতীয় পত্রিকার লৌহজং প্রতিনিধি হিসেবেও কর্মরত রয়েছে। সে উত্তর মেদিনীমন্ডল গ্রামের ওহাব খাঁ’র পুত্র।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক আবু নাছের লিমন প্রায় ১৬-১৭ বছর পূর্বে শ্রীনগরের সমষপুর গ্রামের জয়নাল খাঁ’র মেয়ে তাহমিনা আক্তার ঝুমুরের সহিত কাবিননামার মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের সংসারে আনাছ (১৪) ও আহাদ (৭) নামে দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। গত ৫-৬ বছর পূর্বে দিলরুবা আক্তার নামে এক নারীর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে লিমন। তাদের এ অবৈধ সম্পর্ক জানাজানি হলে স্ত্রী তাহমিনা বিষয়টি লিমনকে জিজ্ঞাসা করলে তাকে প্রায়ই মারধরসহ নানাভাবে অত্যাচার করতো। গত ২৪ জুলাই শিক্ষক লিমন তার পরকীয়া প্রেমিকা দিলরুবাকে নিয়ে তার বাড়িতে যায়। এসময় স্ত্রী তাহমিনা দিলরুবাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বললে লিমন ও দিলরুবা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এসময় তারা তাহমিনার গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর কাউকে কিছু না জানিয়ে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন লোক নিয়ে রাত আড়াইটার দিকে পশ্চিম কুমারভোগ কবরস্থানে লাশ দাফন করে। ঘটনার সময় লিমন ও তাহমিনার দুই পুত্র তাদের নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল।
এদিকে স্বজনরা তাহমিনার মৃত্যু সংবাদ জানতে পেরে শিক্ষক লিমনের কাছে মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এজাহারে এও বলা হয়, থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে নানা তালবাহানা শুরু করে। তাই আদালতের এ মামলা দায়ের করেছেন নিহত তাহমিনা আক্তার ঝুমুরের ভাই মো. কামরুজ্জামান খান। মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-৬ এ দ.বি. ৩২০/৩০২/৩৪ ধারায় গত ১০ আক্টোবর একটি সিআর মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৮১।
লৌহজং থানার ওসি মো. আলমগীর হোসাইন জানায়, গত মাসে মামলাটি আদালত হতে থানায় আসে। ১০ জানুয়ারি একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহত তাহমিনা আক্তার ঝুমুরের লাশ কবর হতে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, নিহত তাহমিনা আক্তার ঝুমুরকে যে মহিলারা দাফন-কাফনের জন্য গোসল করিয়েছে তারা তাহমিনার গলায় কালো দাগ দেখতে পান। কৌশলে তারা ওই সময় মোবাইল ফোনে তাহমিনার গলার কালো দাগের ছবি তুলে রাখেন। এ থেকে বিষয়টি হত্যা বলেই মনে করছে বাদীপক্ষের লোকজন।