নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনার ভয়াবহ ঢেউ যেন নতুন করে সব পরিকল্পনা এলোমেলো করে দিয়েছে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নির্ধারিত সময় পিছিয়ে যাচ্ছে বারবার। তবুও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কোনো তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না কেউই। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চতায়তার ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা চরমে উঠেছে। মুন্সীগঞ্জ শহরে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পনেরো মাসেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার প্রভাব ব্যাপকভাবেই পড়েছে তাদের উপর। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসসহ দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও প্রযুক্তিগত নানা সমস্যার কারণে সেগুলো কার্যকর হয়নি। এমনকি সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব নয়। তাতে শ্রেনীকক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন শিক্ষার্থীরা। মুন্সীগঞ্জে বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উচ্চ শিক্ষা তথা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা রয়েছেন চাপের মুখে। যারা শিক্ষা জীবনের শেষ পর্যায়ে শিক্ষার্থী ছিলেন তারা আজ সেশন জটসহ কর্মজীবনে প্রবেশ করার অপেক্ষা দীর্ঘ হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল নয় এমন পরিবারে শিক্ষার্থীদের পারিবারিক চাপও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সরকারি হরগঙ্গা কলেজের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী এনামুল অনিক বলেন, শেষ মুহুর্তে এসে একটা ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার কারণে প্রায় দুই বছর ঝুলে আছি। একদিকে বয়স বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবারের চাপও বাড়ছে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই হতাশ ও চিন্তিত। আমরা দ্রুত এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে চাই। ক্যাম্পাস খোলা থাকা অবস্থায় নিজের খরচ চালাতে টিউশনি করতাম। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় নিজের খরচ চালানোর চাপ ছিল। আগের মত টিউশনি করতে পারছি না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বেশ হতাশার মধ্যে রয়েছি। সরকারি হরগঙ্গা কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুর ইসলাম, খাইরুল, নাভানা, রবিকুল, সুমন, লামিয়াসহ অনেকেই বলেন, প্রায় পনেরো মাস পেরিয়ে গেছে। লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের জীবন আজ অনিশ্চয়তার মুখে। নীতিনির্ধারকরা এ পরিস্থিতিতে আমাদের নিয়ে না ভাবলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব ! তাই নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ঘরে বসে আর কতোদিন ! পড়ালেখা থেকে দূরে আছি বছর পেরিয়ে গেল। এর মধ্যে অনেক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে। কলেজ খোলা অবস্থায় কোচিং, টিউশনি করাতাম। জানি না ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। এমন সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে এমন হবে ভাবিনি কখনো। জানি না সামনে কী হবে। দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন চরম অনিশ্চয়তায়। দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থাতে এই দেড় বছরে যে ধ্বস,তা আদৌ কাটিয়ে ওঠা যাবে কিনা জানি না।