নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাঁসাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম হাঁসাড়া গ্রামে বসতঘর উঠানো ও সীমানা খুঁটিকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় ভাবির দায়েরকৃত মামলায় দুই দেবর পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অসহায় জীবনযাপন করছে। ওই গ্রামের মৃত আজিজ (আনছার কমান্ডার) শেখের ৫ পুত্র জন্মসূত্রে একই বাড়িতে তাদের বসবাস। আজিজ কমান্ডারের বড় পুত্র জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রাশিদা বেগম (৪৫) বাড়ির সীমানা খুঁটি নিয়ে দুই দেবর রিপনের স্ত্রী সেলিনা (৩৮) ও বকুলের স্ত্রী মাসেদার (৪০) সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশিদা বেগমসহ তার ছেলে আব্দুল আহাদ কন্যা জৌতি আক্তার হামলা চালায়। এতে করে মাসেদা (৪০), কন্যা সাথী (২২), তাজরিন (১৭), জান্নাত (১৫), সেলিনা বেগম (৩৮) ও তার পুত্র মোস্তাকিন (১৭) আহত হয়। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেয়। গত অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখ দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। এসময় মৃত আজিজ শেখের কোনও ছেলেরা বাড়িতে ছিলেন না। পরে রাশিদা বেগম বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় দেবর রিপন ও বকুলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-১৬(১০)২০২০, জিআর ২০৫/২০)। গত ২২ অক্টোবর ওই মামলার ১নং আসামী রিপনসহ ৪ জন জামিনে আসে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে ঘর উঠানোকে কেন্দ্র করে গরমিল হলে আপোষ মীমাংসা হয়ে যায়। পরে সীমানার খুঁটিকে কেন্দ্র করে বড় ভাই জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রাশিদা বেগম বাঁধা প্রদান করে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে রাশিদা বেগম থানায় মামলা দায়ের করে।
স্থানীয় জাহানারা বেগম (৪৯) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কারও কথায় রাশিদা বেগমের মন গলেনা। প্রতিবেশী মো. ইস্রাফিল (৫৫), মো. শাহজাহান আলম (৪৫) বলেন, রাশিদার আচরণ খুবই খারাপ। শেখ বারেক (৬২) বলেন, রাশিদার বিভিন্ন ঝগড়া-ঝাটির বিষয়ে আমি কয়েকবার বিচার-শালিস করেছি। চাচীশাশুড়ি ফাতেমা বেগম (৪৮) বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশিদা বছর দুই আগে আমার ওপর হাত তোলে। অপর চাচীশাশুড়ি মৃত আব্দুর রবের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭০) বলেন, প্রায় ৩ মাস আগে রাশিদা তাকে মারপিট করে। কান্নাজড়িত কন্ঠে বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম বলেন, আল্লাহ দেখছে।
জানা যায়, এ ঘটনায় স্থানীয় সমাজপতিরা রাশিদাকে ২০ হাজার টাকা মুচলেকা দেন। ভ্যান চালক মো. রিপন বলেন, আমরা ৫ ভাই। ছোট ভাইয়ের ঘর উঠানো নিয়ে ভাইয়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করে দেন স্থানীয়রা। পারিবারিক ছোটখাট বিষয় নিয়ে ভাবি (রাশিদা) বাড়ির সবার সাথে খারাপ আচরণ করে। পাড়া প্রতিবেশীরা তা অবগত। ঘর নির্মাণে হিংসায় সে বাড়িতে ঝগড়া শুরু ও হামলা করে। তুচ্ছ ঘটনায় উল্টো মামলা দায়ের করলে ভয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি ছাড়ি আমরা। পরে গত ২২ তারিখে কোর্ট থেকে জামিনে বাড়িতে এসে দেখি আমার বসতঘরের তালা ভাঙা। ভিতরে আসবাবপত্র সব উলটপালট। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে দেখাই। পরে শ্রীনগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। এসময় ভুক্তভোগীরা রাশিদা বেগমের ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবী করেন।
রাশিদা বেগমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘর উঠানো নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যথা নেই। সীমানার খুঁটির বিষয়ে আমি আপত্তি জানাই বলে তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এতে করে মারামারির ঘটনা ঘটে। বাড়ির অন্যান্য লোকজনসহ প্রতিবেশীদের সাথে খারাপ আচরণের নানা অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, একজন মানুষ তো আর সবার কাছে ভাল হতে পারেনা?
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পারিবারিক সমস্যা সমাধানে রাশিদা বেগমকে একাধিকবার ডাকা হলেও তিনি আসেননি। তার এসব খারাপ আচরণে এলাকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভিযোগটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শ্রীনগর থানার এসআই মোকলেছুর রহমান জানান, দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব। তাই সামাজিকভাবে নিজেদের মধ্যে মীমাংসার জন্য বলা হয়েছিল। খোঁজখবর নিয়ে দেখছি সমাধান না হলে মামলা নেওয়া হবে।