নিজস্ব প্রতিবেদক
পানি নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় খাল খনন কাজ শুরু করেছে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি (পাবসস)। এরই মধ্যে ভবেরচর ইউনিয়নের আওতায় মাথাভাঙ্গা, শ্রীনগর, কাউনিয়াকান্দি গ্রাম পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার খাল খনন করা শেষ হয়েছে। এই খাল খননের প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। খাল খননের ফলে অত্র এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে যে নিয়ম অনুযায়ী খালটি খনন করার কথা রয়েছে সেভাবে খনন কাজ করা হচ্ছেনা। খাল খনন করলে ড্রেজিং করতে হয় গভীরভাবে কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে বলছে, নামে মাত্র খালটি খনন করছে। খালটি ড্রেজিং না করে খালের মাটি খালের পাড়ে ফেলছে যা নিয়ম অনুযায়ী খনন কাজটি হচ্ছে না। এর ফলে খালের মাটি কেটে খালের গভীরতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে স্রোত বাড়বেনা, পলি মাটিও আসবেনা। সঠিকভাবে কাজটি বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। এভাবে খনন করলে বরং কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। জানা গেছে, মাথাভাঙ্গা, শ্রীনগর, কাউনিয়াকান্দি গ্রাম পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার খালটি সরকারীভাবে নকশায় এটি খাল হিসেবে থাকলেও পূর্বে কখনো খনন না করায় ভরাট হয়ে মরা খালে পরিণত হয়। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, চরপাথালিয়া খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি (পাবসস) ও স্থানীয় সরকারের পক্ষে ভবেরচর ইউনিয়ন পরিষদের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে খাল খননের উদ্যোগ নেয়। নামেমাত্র খাল খনন করে বাহবা নেওয়ার কাজটি কৌশলে করে যাচ্ছে। শ্রীনগর গ্রামের একাধিক কৃষক জানান, এ খালটি একসময় অনেক বড় ছিল। খালের পানি চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ বছর পর খালটি খনন করায় আমাদের তিন গ্রামের মানুষের উপকার হওয়ার কথা অথচ সঠিক নিয়মে খালটি খনন হচ্ছেনা। একই এলাকার আরেক কৃষক বলেন, খাল খনন প্রকল্পের কারণে মনে করেছিলাম এখন আর জমিতে পানির অভাব হবে না। খালের পানি জমিতে ব্যবহার করতে পারবো। কিন্তু খালতো খনন হচ্ছেনা খালের পাড় মাটি দিয়ে ভরা হচ্ছে যা দুঃখজনক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচেতন মহলের সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা বলছেন, ভবেরচর খাল পুনঃখনন, চর পাথালিয়া খাল পুনঃখনন, চর পাথালিয়া লিংক খাল-১, চর পাথালিয়া লিংক খাল-২, পৈক্ষারপাড় খাল, পৈক্ষারপাড় আলীপুরা খাল, শ্রীনগর খাল উল্লেখিত খালগুলো কোথাও কোথাও খনন করার নামে ভেঁকু দিয়ে নামমাত্র মাটি তুললেও এখনো কাজের কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি। এই কাজের জোর তদন্ত প্রয়োজন। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এলাকাবাসী। ভবেরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন জানান, এই খাল খননের কাজটি সম্পূর্ণ নিয়মের বাইরে করা হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় করার কথা সেভাবে করা হচ্ছেনা। এখানে খাল খননে আগের একটা কমিটি ছিলো তাদের বাদ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের কারণে নতুন পকেট কমিটি করে খাল খননের কাজটি করা হচ্ছে। ১৬ কিলোমিটার জুড়ে খালটি খনন করার কথা ৪ ফুট গভীর করে। কিন্তু ২ ফুট গভীরও হয়নি। আসল কথা হচ্ছে ভেঁকু দিয়ে খাল খনন করা যায় না। এই খাল খনন করতে হলে দরকার কাটিং ড্রেজার যা এখানে ব্যবহার করা হয়নি। অথচ ভেঁকু ভাড়া প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা করে দিয়ে মাত্র ১ সপ্তাহে ১৬ কিলোমিটার খাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করে নয় ছয় করে। এই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতা আরো জানান, এই খাল খননের মাধ্যমে এই কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, দেখে মনে হয় খাল খনন নয় এ যেন ড্রেন পরিষ্কার করেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকৌশলী পার্থ দাস বলেন, অভিযোগটি শুনলাম। সরেজমিনে গিয়ে খনন কাজটি দেখবো। যদি কাজটি যথাযথভাবে সম্পাদন না করে তাহলে যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তাই নেওয়া হবে। মানহীন কাজ হলে ছাড় নয়।