নিজস্ব প্রতিবেদক
মহামারী করোনার প্রকোপের মধ্যে পরপর দলের দুইজন শীর্ষ নেতা হারিয়ে শোকে মুহ্যমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। যার প্রভাব পড়েছে সংসদের চলমান বাজেট অধিবেশনেও। সর্বত্র শোকের ছায়া নেমেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এবং ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে সকল সংসদ সদস্যদের কণ্ঠে ছিলো বিষাদের ছাপ।
রবিবার সকাল ১১টার পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ৮ম অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতেই দিনের সম্পূরক কার্যসূচি অনুযায়ী সাবেক মন্ত্রী ও একাদশ জাতীয় সংসদের খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম এর মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার।
সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী চলতি সংসদের কোনো এমপি মারা গেলে তাদের সম্মানে শোক প্রস্তাব আনা হয়। শোক প্রস্তাব গ্রহণ করার পর সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হবে। একে একে বেশ কয়েকজন সরকারি দল ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য শোক প্রস্তাবের উপর বক্তব্য রাখেন।
শোক প্রস্তাবের উপর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস আলোচনা শুরু করেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সংসদ সদস্য ডাঃ হাবিবে মিল্লাত, মোস্তফা লুৎফুল্লাহ প্রমুখ।
সবার কণ্ঠেই ছিলো সহযোদ্ধাকে হারানোর বেদনা। সদ্য প্রয়াত রাজনীতিবিদদের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণও করেছেন কেউ কেউ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আপ্লুত কণ্ঠে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। করোনা মহামারীর মধ্যে অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছি। এ সংকটে আমার প্রিয়জনের জানাজায়ও অংশ নিতে পারছি না। আমার বড় কষ্ট, প্রিয় বন্ধু নাসিমকে হারিয়েছি।
করোনা উপসর্গ নিয়ে ১ জুন ঢাকার বেসরকারি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্ট্রোক হয় তার। অস্ত্রোপচারের পর তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। পরে পরীক্ষায় তার করোনা নেগেটিভ আসে। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মোহাম্মদ নাসিম বর্তমান সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রও তিনি। রবিবার তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া শেখ আবদুল্লাহ। গোপালগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। ওই এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড তিনিই তত্ত্বাবধান করতেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একাধিকবার ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আবদুল্লাহ টেকোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়ায় এভাবে শোক প্রস্তাব আনার সুযোগ নেই। কিন্তু সংসদে তা মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। আর শোক প্রস্তাবে তাকেও স্মরণ করছেন।