নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিজমি অনাবাদি না রাখার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু করে স্বল্পসুদে মাঝারী ঋণসহ প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রণোদনাও দিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষিকাজ অব্যাহত রাখতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অথচ দিন দিন ফসলি জমির সংখ্যা কমে যাওয়ায় কৃষি স্বনির্ভরতা হারাচ্ছে বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছরে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে শুধুমাত্র মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কয়েক হাজার বিঘা জমি ভরাট করে হাউজিং, বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তিমালিকানা ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারিভাবে ফসলি জমি ভরাটের বিধিনিষেধ থাকলেও সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধের কোন তোয়াক্কা না করে বিনা অনুমতিতে জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করেই অনেকটা নিরবেই ভরাট করা হচ্ছে ফসলি জমি।
কৃষকদের একাংশ বলছেন, ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকি না থাকায় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ফসলি জমি ভরাট করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। একসময় ৬টি উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সীগঞ্জ জেলাকে আলুর রাজধানী বলা হতো। জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠের অধিকাংশ জমিতে আলু ও ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতে দেখা যেতো এ অঞ্চলের কৃষকদের। কিন্তু বর্তমানে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মাঠ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। অধিকাংশ জমি ভরাট করে ব্যক্তিমালিকানা ও বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির সাইনবোর্ড টাঙানো হচ্ছে মর্মে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরেজমিনে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ঘুরে প্রায় সবকয়টি ইউনিয়নেই ফসলি জমি ভরাটের কার্যক্রম চলমান থাকলেও রশুনিয়া, ইছাপুরা, কেয়াইন, বয়রাগাদী ও মালখানগর ইউনিয়নে ফসলি জমি ভরাটের কার্যক্রম চলছে অনেকটা জোরালোভাবেই। উপজেলার ইউনিয়নসমূহে যেসব ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে দু-একটি ছাড়া কারোরই কোন অনুমোদন নেই। এমনকি কেউই জমির শ্রেণী পরিবর্তন করেননি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে ৮ হেক্টর তথা ৫৫-৬৯ বিঘা ফসলি জমি ভরাট করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে এর চিত্র পুরোটাই ব্যতিক্রম। উপজেলা জুড়ে যে হারে ফসলি জমি ভরাট করা হয়েছে তা সরকারি হিসেবের কয়েকগুণ।
এদিকে সুশীল সমাজের সচেতন মহলের সচেতন নাগরিকরা বলছেন, যেভাবে ফসলি জমি ভরাট হচ্ছে তাতে করে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কৃষিজমি ৫০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, গৃহ নির্মাণের কারণে দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশের উপর যেমন বিরূপ প্রভাব পড়ছে তেমনি ফসল উৎপাদনে কৃষিজমির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ শুভ্র এর কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে রিপোর্ট দিচ্ছি। আমাদের করণীয় যেসব ফসলি জমি ভরাট হচ্ছে সেগুলোর রিপোর্ট প্রশাসনকে দেওয়া। প্রশাসন এগুলোর ব্যবস্থা নিবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিস্তারিত জানতে হলে আপনি অফিসে আসুন।