নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মাটিভর্তি অবৈধ মাহেন্দ্র আটক করে রাস্তা অবরোধ করেছে এলাকার নারী-পুরুষ। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের পূর্ব রামকৃষ্ণদী এলাকায় এই অবরোধ করেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আলো-আঁধারে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে ফসলি জমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে প্রভাবশালী মহল। চলছে ফসলি জমির মাটিকাটা উৎসব। তিন ফসলি কৃষিজমি পরিণত হচ্ছে পুকুর-ডোবায়। দিনদিন ফসলের উৎপাদন কমছে, বেকার হচ্ছে কৃষক, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। মাটি পরিবহনে ভারী ট্রাক ও মাহেন্দ্র ট্রলি ব্যবহারে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ। আইন অমান্য করে এমনি কর্মকান্ড চলছে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভেঁকু দিয়ে এ মাটি কাটছে। অবৈধ মাহেন্দ্র চলাচলে ধুলার কুয়াশায় ঢেকে গেছে গোটা এলাকা, দেখার কেউ নেই। রাস্তা অবরোধকারীরা জানান, উপজেলার কংশপুরা গ্রাম থেকে নয়াগাঁও বাজার হয়ে ও খিদিরপুর হয়ে পাথরঘাটা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা ধুলার কুয়াশায় ঢেকে গেছে। এই রাস্তায় প্রতিদিন হাজার মাটির ট্রাক ও অবৈধ মাহেন্দ্র চলাচল করে। এলাকা ধুলাবালুতে আচ্ছন্ন হয়, এতে করে যাতায়াতে নানা শ্রেণির মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে জনমনে ক্ষোভ। এ অবস্থায় দিশেহারা ও অসহায় জীবনযাপনসহ স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। উপজেলা প্রশাসনিক দপ্তর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটারের মধ্যে ভোর ৫টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কাটছে। দেখলে মনে হয়, সরকার থেকে অনুমতি নিয়েই তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। পূর্ব রামকৃষ্ণদী গ্রামের মৃত বারেক মাদবরের ছেলে সালাম মাদবর (৬০) জানান, রাস্তার ধুলাবালুর জন্য চলাফেরা করতে পারি না, পোলাপাইন কাশে। ঘরের ভিতরে খাইতে বইলে খাওনের মধ্যে রাস্তার ধুলাবালু এসে পড়ে। এই মাহেন্দ্র দুই একদিন পরপরই এক একটা দূর্ঘটনা ঘটায়। কুচিয়ামোড়া আদর্শ কলেজের অনার্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বকুল আক্তার জানান, করোনার কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় আমাদের প্রাইভেট পড়তে এই রাস্তা দিয়ে যেতে আসতে দুই তিনটা মাস্ক পরিবর্তন করতে হয়। ধুলাবালু শ্বাসনালী দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, চর্মরোগ বৃদ্ধি করে। এই দেখেন এ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে আমারও চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। মাটির গাড়ির রাস্তায় পড়ে থাকা মাটি একটু বৃষ্টি হলে কাদায় একাকার হয়ে যায়। এই কাদায় ছোট ছোট যানবাহন, হোন্ডা, অটোরিকশা দূর্ঘটনার শিকার হয়। নতুনচর প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা সানজিদা আক্তার জানান, এই মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে মাটির গাড়ির ধুলাবালু আরেক মাত্রা যোগ হবে বলে আমি মনে করি। ধুলাবালু শুধু ছোট বাচ্চাদেরই আক্রান্ত করেনা বড়দেরও শ্বাসকষ্ট বাড়ে, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পায়।