নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের জৈনসার ইউনিয়নের কাঁঠালতলী গ্রামের কবরস্থান যাওয়ার রাস্তার সংস্কারে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম ঢালীর বিরুদ্ধে। চলতি বছরের শুরুতে ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্য এ রাস্তার কাজ শুরু করে প্রকল্পের সভাপতি মোয়াজ্জেম ঢালী। তবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কাজ হলেও তিনি সরকারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ড্রেজার ও ভেকু মেশিন দিয়ে কাজ সম্পন্ন করে। সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাঁঠালতলী বাবুলের বাড়ী হইতে কাঁঠালতলী পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি পর্যন্ত কবরস্থানের রাস্তাটি মেরামতের জন্য সরকারীভাবে হতদরিদ্রদের ৪০ দিনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫ লক্ষ ৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার ও উক্ত প্রকল্পের সভাপতি মোঃ মোয়াজ্জেম ঢালী গ্রামবাসীদের জানান, উক্ত প্রকল্পের সরকারী বরাদ্দ বাতিল হয়ে গেছে। তাই এলাকা থেকে চাঁদা তুলে প্রকল্পের কাজ করতে হবে। তার কথা বিশ্বাস করে এবং রাস্তার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে কাঁঠালতলী গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ৩ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা চাঁদা তুলে মোঃ মোয়াজ্জেম ঢালী এবং তার অনুমতিক্রমে তার চাচা আবু তৌহিদ এর হাতে স্থানীয় মুরুব্বিদের উপস্থিতিতে নগদ টাকা প্রদান করা হয়। কিন্তু উক্ত প্রকল্পের সভাপতি ও ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ মোয়াজ্জেম ঢালী সরকারী বরাদ্দকৃত সম্পূর্ণ অর্থ সে নিজেই আত্মসাৎ করে এবং উত্তোলনকৃত চাঁদার ৩ লক্ষ ১৪ হাজার টাকার মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকাও আত্মসাৎ করেছে বলে জানায়। উল্লেখিত রাস্তাটি মেরামতের জন্য ড্রেজারের মাধ্যমে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার ফুট মাটি পাশের তিনটি পুকুর খনন করে রাস্তায় ব্যবহার করা হয় এবং মাত্র চল্লিশ ঘন্টার চুক্তিতে ভেঁকু দ্বারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ শেষ করা হয়। তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে রাস্তার পাশে অবস্থিত অনেকের বাড়ীর ভিটি জমি জোরপূর্বক খাড়া করে কেটে নেয়া হয়েছে। যার কারণে বর্তমানে রাস্তা এবং পাশের বাড়ীগুলো ভাঙতে শুরু করেছে। এছাড়াও তিনি এলাকায় প্রচার করেন যে, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা রাস্তাটি মেরামতের কাজে খরচ করেছি’। তার এমন কর্মকান্ডে এলাকার অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ বিষয়ে তাকে কেউ কিছু বললে তিনিসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ এলাকাবাসীকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি ও খারাপ ভাষায় গালি-গালাজ করেন। গ্রামের আলহাজ্ব শেখ মোহাম্মদ নাজিম, শামিম শিকদার, শাহ্ আলম মৃধা, এমদাদুল হক পলাশসহ অনেকেই বলেন, আমাদের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছে মেম্বার। আমরা সবাই মিলে রাস্তার জন্য টাকা দিয়েছি। বর্ষা মৌসুমে কবরস্থানে লাশ দাফনে যাতে কোনো সমস্যা দেখা না দেয়, সেই জন্য রাস্তা নির্মাণের টাকা ও অনেকের জমির মাটি দেওয়া হয়েছে। অনেকের বাড়ির মাটি পরবর্তিতে ভরাট করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেটে নিয়েছে। ইউপি মেম্বার আমাদের টাকায় রাস্তা নির্মাণ করেছে। তারা আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি রাস্তা নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ এসেছে। যদি সরকারি টাকা এসে থাকে তবে আমাদের টাকা নেওয়ার কারণ কি-তা খতিয়ে দেখে রাস্তা নির্মাণ কাজের এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবী করেছেন গ্রামবাসী। এ ব্যাপারে উপজেলার জৈনসার ইউপি ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মোয়াজ্জেম ঢালী বলেন, আমি প্রকল্পের বরাদ্দের টাকায় রাস্তার কাজ করিয়েছি। এলকাবাসীর থেকে আমি কোন টাকা উঠাইনি। রাস্তা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য রাস্তার পাশের খাল ভরাট করার জন্য শমসের আলম ভূইয়ার অনুমতিক্রমে এলাকবাসী তৌহিদ কাকার কাছে টাকা দিয়েছে আর সে টাকা দিয়ে তারাই ড্রেজারের মাধ্যমে বালি দিয়ে খাল ভরাট করেছে। ভেঁকু মেশিন দিয়ে রাস্তার কাজ করানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন। আমি ভেঁকু দিয়ে কোন কাজ করাইনি যা করিয়েছি তা লেবার দিয়েই করিয়েছি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আইমিন সুলতানা বলেন, আমরা সেখানে প্রকল্প দিয়েছি তার কাজ সঠিকভাবে শেষও হয়েছে। তবে অনিয়ম বা দুর্নীতির ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। যদি কোন ধরনের দূর্নীতি হয়ে থাকে এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিরাজদিখানে রাস্তা সংস্কারের নামে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রকল্প ও এলাকাবাসীর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
আগের পোস্ট