নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের সবচেয়ে বড় যোগাযোগ অবকাঠামোর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ চ্যালেঞ্জ আর প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক হয়ে দাঁড়ানো পদ্মা সেতুর দ্বার খুলল।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। রবিবার সাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু। এর আগে আজ সকালে হেলিকপ্টারে করে মাওয়ায় পৌঁছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী মাওয়ার সুধী সমাবেশে অংশ নেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সূচনা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন। এরপর বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটা আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক। এটা আমাদের আবেগ, বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। পদ্মা সেতুর জন্য আমি গর্ববোধ করি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আসা সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সংশ্লিষ্টরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য শেষে সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর ছবি সম্বলিত ১০০ টাকার নোট ও স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করেন। পরে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে সেতুর প্রথম টোল দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ম্যুরাল ও ফলক উন্মোচনের স্থানে যান তিনি। সেখানে মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।পরে বেলা ১২টার দিকে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। পরে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর ওপর দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সেতু পারি দেয়ার সময় মাঝপথে বিরতি দেয় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গীরা ছবি তুলেন এবং বিমান বাহিনীর ফ্লাইং ডিসপ্লে উপভোগ করেন।
১২টা ২৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর সেতুর জাজিরা প্রান্তের দিকে রওনা হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গাড়িবহর জাজিরা প্রান্তে পৌঁছায়। সেখানে মোনাজাত হয়। এরপর জাজিরা প্রান্তে পৌঁছে ১২টা ৪০ মিনিটে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরীসহ অতিথিবৃন্দ।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সেখানে মুহুর্মুহু স্লোগান ও করতালিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান লাখো জনতা। পরে কাঁঠালবাড়িতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এই সমাবেশে ১০ লাখ লোক জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আজ ভোর থেকেই দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকেও বাস, আর লঞ্চে করে মানুষ আসতে শুরু করে।
জাতির ইতিহাসের এই মাহেন্দ্রক্ষণ ঘিরে পদ্মার দুই তীরের পাশাপাশি সারা দেশে উৎসবের সাজ। উৎসবস্থলে ভোর থেকেই জমায়েত হতে শুরু করে। সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা আগেভাগে এসে অনুষ্ঠানে পৌঁছান।
পদ্মা সেতু নিছক একটি সেতু নয়, এটা বাংলাদেশের সামর্থ্য আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করার পাশাপাশি পুরো দেশের সামনে খুলে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। আর পথরেখা ধরে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।