নিজস্ব প্রতিবেদক,২৮ অক্টোবর: পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদী বিধৌত প্রাচীন সভ্যতার জনপদ মুন্সীগঞ্জ। এ জেলা ঘিরে সরকারি-বেসরকারিভাবে শুরু হয়েছে নানা উন্নয়ন কর্মকা-। কিন্তু জেলা শহরে শিশুদের খেলাধুলা ও মানসিক বিকাশের জন্য নেই কোন বিনোদনের ব্যবস্থা। শিশু পার্কের জন্য নিজস্ব জমি ও সাইনবোর্ড থাকলেও নেই বিনোদনের ব্যবস্থা। দুর্নীতি ও অহেলার কারণে জেলার শিশুদের স্বপ্নের এই শিশুপার্কটি দীর্ঘ ২৬ বছরেও সচল করা সম্ভব হয়নি। মেয়র আসে, মেয়র যায়-কিন্তু পৌর নাগরিকদের স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেয়নি আঁজো। এর ফলে বিনোদন থেকে জেলার শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র “শেখ রাসেল পৌর শিশুপার্ক”-নামে দেড় একর (১৫০ শতাংশ) জমির ওপর এই পার্কটি নতুন করে সচল করার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। ১৯৯০ সালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। এরপর ১৯৯২ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্রে শিশুদের বিনোদনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন সড়কের পশ্চিমপার্শ্বে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে শিশুপার্ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরজন্য বরাদ্দ হয় ৮৮ লাখ টাকা। শিশুপার্ক নির্মাণের সময়সীমা ছিলো ৬ মাস। সে সময় ভায়া মিডিয়া নামে এই প্রকল্পের ঠিকাদার বিভিন্ন অজুহাতে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। পরবর্তীতে চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন না করেই ভায়া মিডিয়া কাজ বন্ধ করে দেয়। এর পরের বছর ১৯৯৩ সালে ৪ জানুয়ারি তৎকালীন এলজিআরডি উপমন্ত্রী আব্দুল হাই পার্কটির শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর কয়েক বছরের মধ্যেই শিশুদের খেলার সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এবং শিশুদের খেলার সামগ্রী পার্কেটিতে যা ছিলো তা বর্তমানে আর নেই। এরপর ২০০৬ সালে তৎকালীন পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান পার্কটি সচল করার জন্য ওয়ান্ডারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করেন। নির্মাণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কোন অগ্রগতি হয়নি পার্কটি সচলে। পার্কটি বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা ইতোমধ্যে ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। ডিজাইনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে শিশুপার্ক নির্মাণে জন্য এই টাকা বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে। বরাদ্দ পেলেই মুন্সীগঞ্জ পৌর নাগরিকদের এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নাগরিকরা জানিয়েছেন, পার্কের জায়গা আছে, কিন্তু পার্কটি হচ্ছে না-এটা দুঃখজনক। অচিরেই তারা একটি শিশুপার্ক দেখতে চান। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নারী কাউন্সিলর নার্গিস আক্তার বলেন, শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি শিশুপার্ক খুবই প্রয়োজন। বিগত সময়ে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম হয়েছে। বর্তমান মেয়র সে উন্নয়ন কার্যক্রমে এগিয়ে আছেন। কিন্তু ধারাবাহিক অনুসারে তার বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হয়নি। আশা রাখি বর্তমান মেয়রের আমলেই শিশুপার্কটি বাস্তবে রূপ নেবে।বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হামিদা খাতুন বলেন, মেয়র অনেকবার বলেছেন, হয়ে যাবে। কিন্তু শিশুপার্কটি হচ্ছেনা-এটা আমাদের মুন্সীগঞ্জ জেলার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। জায়গা নির্ধারণ কথা আছে। এই বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র এগিয়ে এসে তারা পৌর শিশুপার্কটি বাস্তবে রূপ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সোহেল বলেন, বিভিন্ন সময়ে পৌরসভার মেয়রগণ নজর না রাখাতে শিশুপার্কটি নির্মাণ করা যায়নি।শিশুদের খেলাধুলা ও মানসিক বিকাশের জন্য শিশুপার্কটি কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব জানান, জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের পৌর শিশুপার্কটির নির্মাণ বাকি রয়েছে। শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য ডিজাইনসহ সিভিলের সব কাজ শেষ হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই শিশুপার্কটি নির্মাণ করা সম্বব হবে।