নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে অপহরণ মামলার আসামী শ্রীঘরে গেলেও অপহৃত ছাত্রের স্কুলে উপস্থিতিতে বিস্ময় দেখা দিয়েছে। গত রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাশুর এতিমখানা রাস্তা হতে কামারগাঁও আলহাজ্ব ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র জিদান (১৩)কে অপহরণ করার অভিযোগ এনে মুন্সীগঞ্জ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ছাত্রের মা মিরা আক্তার (৩৮) একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। পরে গত ২৭ আগস্ট শ্রীনগর থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়। যার মামলা নং- ৩৫(৮)২২। উক্ত মামলায় গত ৩০ আগস্ট মামলার ১নং আসামী আলী হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন। অন্যদিকে মামলার এজাহারে জিদানকে ১৪ আগস্ট অপহরণ করার কথা উল্লেখ করলেও তার দুইদিন পর অর্থাৎ ১৬ আগস্ট জিদান বিদ্যালয়ে ক্লাস করেছে বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম হোসেন। অপহৃত ছাত্র কিভাবে বিদ্যালয়ে ক্লাস করছে তা নিয়ে বিস্মিত এলাকাবাসী। তবে গত ১৬ আগস্টের পর তাকে আর বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩ বছর পূর্বে আসামী আলী হোসেনের স্ত্রী নাদিরা বেগম (৩৮) পার্শ্ববর্তী পূর্ব কাঁঠালবাড়ী এলাকার অপহৃত ছাত্রের মা মিরা আক্তারের নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা মাসিক সুদে ১ লক্ষ টাকা নেন। কয়েক মাস সুদের টাকা দিলেও পরে আর দিতে না পারায় এই নিয়ে কয়েক দফা সালিশ হলেও পুনরায় গত ২ মাস আগে আসামী আলী হোসেনের বাড়ীতে সালিশ হয়। সালিশে অপহৃত ছাত্রের মা ৩ লক্ষ টাকা পাওয়ার দাবী উঠালে গ্রহীতা নাদিরা ১ লক্ষ টাকার কথা জানায়। মিরা বলে, সে কুরআন নিয়ে শপথ করে বলুক, আমি ১ লক্ষ টাকা পাই এইটাই বিশ্বাস করবো। সালিশদারদের কথামতো নাদিরা তার ছোট মেয়েসহ কোরআন ধরে শপথ করে ১ লক্ষ টাকা পাবেন বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু মিরা সালিশদারদের উপেক্ষা করে টাকা না নিয়ে চলে যায়।
সালিশদার মাসুদ মাদবরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমিসহ স্থানীয় দুইজন মেম্বারসহ আরো অনেকেই সালিশে ছিলাম। কিন্ত সালিশ উপেক্ষা করে টাকা না নিয়েই মিরা চলে গিয়ে নাদিরার স্বামী আলী হোসেনকে আর বিদেশে যেতে দিবে না, কিভাবে বিদেশ যায় দেখে নিবে বলে হুমকি দিতে থাকে। আমরা নাদিরাকে থানায় একটি জিডি করতে বলি। নাদিরা থানায় মিরার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করে।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীনগর থানার এএসআই আহসান হাবিব বলেন, আমি বাদী নাদিরা বেগমের অভিযোগ পেয়ে ঘটনা তদন্ত করি। তদন্ত করে দেখি, বাদীর কাছে বিবাদী মিরা ১ লক্ষ টাকা পাবে। এ নিয়ে স্থানীয়রা সালিশও করেছে। কিন্তু বিবাদী মিরা ৪ লক্ষ টাকা পাবে বলে আমাকে জানায়। আমি টাকার পাওয়ার দলিল দেখাতে বললে তিনি দেখাতে পারেননি। আমি দুইপক্ষকে ডেকেছিলাম কিন্ত কেউ আসেনি। পরে জানতে পারি, বিবাদী মিরা বাদী নাদিরার বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেছে।
অপহরণ মামলার ১নং সাক্ষী ওমর মৃধার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি দূরে আছি। আপনারদের সাথে দেখা করে কথা বলবো।
২নং সাক্ষী ফারুক শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অপহরণ করতে দেখিনাই। লোকমুখে শুনছি। আমিও নাদিরার কাছে টাকা পাবো তাই সাক্ষী হইছি।
এ ব্যাপারে ভাগ্যকুল ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মনোয়ার হোসেন শাহাদাৎ বলেন, আমি এই স্কুলের সভাপতি। তাই দেখলাম যে ছাত্র দুইদিন আগে অপহরণ হলো সে আবার দুইদিন পর স্কুলে ক্লাস করেছে। এই মামলার মধ্যে রহস্য রয়েছে। বাদী মিরা ও তার বোন লাকী আক্তার আমার ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানুষ। তাদের সাথে কেউ পারে না। দুইদিন পরপর যাকে তাকে হয়রানি করে।
অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীনগর থানার এসআই শুভংকর রায় বলেন, মামলাটি কোর্ট থেকে থানায় এফআইআর হিসেবে গণ্য করার আদেশ দিয়েছে। তাই মামলা রেকর্ড করে ১নং আসামীকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করি।