পানির স্রোতে নদীগর্ভে বিদ্যুতের খুঁটি, ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী বিদ্যুতের ৩৩ কেভি লাইন; ভোগান্তিতে ৩ উপজেলার লাখো মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোতের চাপ আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তনে ভেঙ্গে যাচ্ছে গ্রাম। পানির প্রবল স্রোতে নদীগর্ভে চলে গেছে বিদ্যুতের ২ পুল (খুঁটি), ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের ৩৩ কেভি লাইন। এতে ভোগান্তিতে রয়েছে লৌহজং, শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলার লাখো মানুষ। এ জেলায় বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই, নেই লোডশেডিং। তারপরও এসব কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রাহকদের, প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকে না। গত তিন দিন আগে অতিস্রোতের কারণে সিরাজদিখান ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার মাঝামাঝি তালতলা-ডহুরি খালটির উপর ৩৩ কেভি লাইনের ২টি পুল (খুঁটি) নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কান্দাপাড়া ও সিরাজদিখান উপজেলার বাড়ৈই পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে ভাঙ্গন দেখা দেয়। সিরাজদিখান ও টঙ্গীবাড়ি সংযোগ সেতুটি হুমকির মুখে, যে সেতুটি বাড়ৈপাড়া ও কান্দাপাড়া সংযোগ স্থানে অবস্থিত। সেতুটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ ভারী যানবাহন চলাচল একমাস আগে থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে। পাশেই রয়েছে সম্রাট কোল্ড স্টোরেজ। তাদের বেশ কিছু জমি কয়েক বছরে ড্রেজিং করে ভরাট করে নেয়ায় নদীর গতি পথ পরিবর্তন হয়। তাদের কারণে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কান্দাপড়া গ্রামের বেশ কিছু বাড়ি-ঘর নদীর পানির স্রোতে ভেঙ্গে গেছে। কোল্ড স্টোরেজের পাশেই বৈদ্যুতিক খুঁটি। এটি লৌহজং, শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলায় সঞ্চালন রয়েছে। লাইনটি ডাবল সার্কিট ৩৩ কেভি ফিডার। এ লাইন দিয়ে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লক্ষাধিক গ্রাহকদের মাঝে দেয়া হয়েছে। গত তিনদিন আগে ১২ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে বিদ্যুৎ লাইন সচল করা হয়। এ সময় এ অঞ্চলের ৭৫ হাজার গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েন। এসময় পল্লী বিদ্যুতের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা জিএম, এজিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের ঠিকাদার লাইনম্যান ও আলোর গেরিলা নিয়ে লাইনটি অস্থায়ীভাবে চালু করেছেন। স্থায়ী টাওয়ার নির্মাণের জন্য গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা জিএম, এজিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার এ.এইচ.এম মোবারক উল্লাহ জানান, নদী থেকে সরকারীভাবে অনুমোদনবিহীন মাটি তোলা হতো। এর আগেও আমরা বিভিন্ন সময় এই বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। এখনো যেভাবে নদীটা গতি নিয়েছে এতে মনে হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে মাটি নিয়েছেন, তাদের কারণেই আজকের এই বিপর্যয়। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ঢাকা জোন (দক্ষিণ) এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, মুন্সীগঞ্জের গিডের তালতলা এবং নিমতলা ৩৩ কেবি ফিডার টিপ পড়ে। ফলে আমাদের ৭৬ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হন। আমরা আমাদের গেরিলা টিম দেখতে পায় আমাদের দুটি খুঁটি নদীতে পড়ে গিয়েছে। এরপর আমরা বিকল্প মাধ্যমে ৪০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। সম্রাট কোল্ড স্টোরেজের (জিএম) ওমর ফারুক জানান, সম্রাট কোল্ড স্টোরেজ ড্রেজিং করে বা অবৈধভাবে মাটি নিয়েছে যে কথাটি উঠেছে সেটা সঠিক না। এখানে বিআইডব্লিউটিএ আমাদের এই সাইডে কিছু বালু ফেলে দিয়ে গেছে। এখনো আমরা নদীতে সম্পদ পাওনা আছি। এ সম্পদ আমাদের না হলে চার বছর আগে এখানে যত সরকারী কর্মকর্তা আছে আমাদের হেনস্থা করতো। কেউ আমাদের কিছু করতে পারেননি। পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিগুলো আমার অপজিট সাইডে। যাদের জমিগুলোর পাশ দিয়ে খুঁটিগুলো পড়ে গিয়েছে তারা মাটিগুলো কেটে নেয়ার কারণে হয়েছে।