নিজস্ব প্রতিবেদক
বেলা ১১টা ৮ মিনিট। টঙ্গীর ইজতেমাস্থল ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার জনসমুদ্রে হঠাৎ নিরবতা। মাঝে মধ্যে ভেসে আসে লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির কন্ঠে ‘হে আল্লাহ, ইয়া আল্লাহু, আমিন’, ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনি।
নিজ নিজ গুনাহ মাফ, ইমানি মৃত্যু নসিব, সমস্ত মুসলমানের জানমালের হেফাজত, হালাল রোজগার, আত্মশুদ্ধি, দুনিয়ার ও আখেরাতের সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজতের আশায় দুই হাত তুলে অনুনয়-বিনয় করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করে ফরিয়াদ জানায় আখেরি মোনাজাতে শরিক হওয়া ইজতেমাস্থল ও এর আশপাশ এলাকার কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান নেয়া কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও বিভিন্ন বয়সি শ্রেণি পেশার মানুষ। মোনাজাতে দেশ-জাতির শান্তি-কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালে মুক্তি কামনা করা হয়।
এবারের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ৩৮ মিনিট স্থায়ী হয় আখেরি মোনাজাত। প্রথম ১৮ মিনিট উর্দুতে এবং ২০ মিনিট বাংলায় মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের।
এর আগে সমাবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে হেদায়াতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। এ আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো এবারের মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা।
আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ছাড়াও আশপাশের জেলার মুসল্লিরা শীত উপেক্ষা শনিবার রাত থেকেই ইজতেমা ময়দানে আসেন।
মোনাজাত উপলক্ষে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের অভিমুখী সকল সড়ক মহাসড়কে ভোররাত ৪টা থেকে সকল ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হয়। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সব সড়ক দিয়ে রোববার ভোর থেকে মুসল্লিরা হেঁটে দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লিদের সমাগত বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ইজতেমাস্থলের আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত লোক সমাগম ছড়িয়ে পড়ে।
এবার ইজতেমার শুরুর আগেই তাবলীগ জামাতের মুসল্লি দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়। পড়ে মুসল্লিরা মাঠের আশে-পাশে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাতে, কামারপাড়া সড়ক ও সড়কদ্বীপে, তুরাগ নদীর পশ্চিমপাড়সহ বিভিন্ন অলি-গলিতে অবস্থান নেন।
আশপাশের জেলার আরো কয়েক লাখ মুসল্লি আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে আসায় মানুষের সমাগম আরো বৃদ্ধি পায়। ফজরের নামজের আগেই ইজতেমাস্থল সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কে পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে অবস্থান নেন।
এছাড়াও পাশ্ববর্তী বাসা-বাড়ি, কলকারখানা-অফিস, দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৫/৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এসব এলাকার যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষের কাফেলা। নানা বয়সি ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকায় আসেন।
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব সমাপ্ত
আগের পোস্ট