নিজস্ব প্রতিবেদক
অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে মুন্সীগঞ্জ সড়কের উপরে থাকা বর্তমানের মাছ ও কাঁচা বাজারটি আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেই হিসেবে সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে বাজার ব্যবসায়ি কমিটি সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বাজার সরিয়ে নেয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অভিমত প্রকাশ করেছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবকে সামনে রেখে চলতি অর্থ বছরের ২০ এপ্রিল থেকে মুন্সীগঞ্জ শহরের বড় বাজারের মাছ ও কাঁচা বাজারটি স্থানারিত করা হয় সেই সময় থেকে। মুন্সীগঞ্জ সুপার মার্কেট এলাকায় ওয়ান ওয়ে রাস্তার পূর্ব পাশে কাঁচা বাজারটি বসানো হয়। আর পশ্চিম পাশে মাছের বাজারটি বসানো হয় ছিলো। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে সুপার মার্কেট থেকে কৃষি ব্যাংক পর্যন্ত এ দুটি বাজারের পরিধি বৃদ্ধি পায়। প্রায় সাড়ে চার মাসের মতো এ বাজার এখানে চলার পর আজ মঙ্গলবার বাজার দুটির পসরা পূর্বের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। অনেকের সূত্র মতে, প্রধান বাজারের মহলদাররা বিপুল অর্থ দিয়ে বাজারের ডাক নিলেও বাজারটি স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে লোকসানের মুখে পড়েছে। এছাড়া স্থানান্তরিত বাজারে আগের মতো বেচাকেনা না হওয়ায় অনেকেই ক্ষতির মুখোমুখিতে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। মাছ ও কাঁচা বাজার স্থানান্তরিত হওয়ায় বড় বাজারের মুদিসহ অন্যান্য দোকানদারদের বেচাকেনা আগের মতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাতেও বড় বাজারের দোকানদাররা লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। বড় বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান লিন্টু জানান, বড় বাজারে মাছ ও কাঁচা বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দোকান পাতা রয়েছে এখনো। সেই হিসেবে বর্তমানে এখানে পুনরায় মাছ ও কাঁচা বাজার বসানো হলে তেমনটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে তিনি দাবি করেছেন। বাজারে আগত ক্রেতারা যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করে তবে এখান থেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি আরো বলেন, দেশে যখন একযোগে করোনা দেখা দিলো তখন এ বাজারটির আংশিক অংশ পশ্চিম পাশের রাস্তায় প্রথমে বসানো হয়েছিল। কিন্তু বাজারে প্রতিদিনই মাত্রার বাইরে ক্রেতাদের ভিড় থাকায় পরে বাজারটি সুপার মার্কেটে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই সময় এ শহরের মানুষের ধারণা ছিলো যে, করোনাকালীন সময়ে এখানে সব কিছুরই সংকট দেখা দিবে। এ কারণে এ বাজারে সেই সময় এতো ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাজার করা ও পরে এক দুই দিন বন্ধ রাখার পর আবারো বাজার খোলার কারণেও এখানে এতো ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এখন আর সেই পরিবেশ নেই। তাছাড়া এখানকার বাজার ছাড়া এ জেলায় আর কোথাও বাজার স্থানান্তরিত হয়নি। তবে কেন আমাদের বাজারটি সেখানে আরো থাকবে। তাই আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে ও মুন্সীগঞ্জ পৌর মেয়রের কাছে অনুরোধ জানালে তাদের সিদ্ধান্তেই আমরা এখানে বাজার ফিরিয়ে আনছি। সেখানকার বাজারে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ছাপড়ার মধ্যে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে হচ্ছে। দীর্ঘ মাস সেখানে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করার কারণে অনেকেই ইতোমধ্যে জ্বর ও ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ ইতোমধ্যে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তারা হচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হামিদা খাতুন বলেন, করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে অনেকদিন হলো মাছ ও কাঁচা বাজারটি রাস্তার উপরে রয়েছে। সেদিক থেকে কেনাকাটা রাস্তার উপর থেকেই পৌরবাসীকে করতে হচ্ছে। এদিকে রাস্তার উপর বাজার অন্যদিকে এই রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। তাতে এ বাজারে আগত ক্রেতারা নানা রকমের অসুবিধার মধ্যে পড়ছে। বড় বাজার সবদিক থেকেই সরু। যদি বাজার কমিটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে সেখান মাছ ও কাঁচা বাজার বসাতে পারে তাতে কোন অসুবিধা হবে না বলে আমার মনে হয়। মুন্সীগঞ্জ জেলা সম্মিলিত জোটের আহ্বায়ক নাট্যকার সাব্বির হোসেন জাকির বলেন, করোনা পরিস্থিতি আরো একটু দেখলে ভালো হতো। আরো একটু অপেক্ষা করে এখানকার বাজারটি বড় বাজারে নিলে ভালো হতো বলে আমি মনে করছি। এছাড়া করোনা বিষয়ে বিশ্ব পরিস্থির ওপর লক্ষ্য রেখে আর কিছুদিন এ বিষয়ে ভাবলে ঠিক হতো। শিক্ষক নেতা কে.এম. সাইফুল্লাহ ভূইয়া বলেন, এখনো করোনার প্রাদুর্ভাব তেমনটা কমেনি। তাই এ মুহুর্তে এখান থেকে বাজারটি বড় বাজারে নেয়া সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি। তাছাড়া এখনো সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অংশের মাস্কটি বেশিরভাগ মানুষ ব্যবহার করছে না। সেই অবস্থায় এ বিষয়টি আরো একটু অপেক্ষা করা যেতে পারতো। কবি যাকির সাইদ বলেন, করোনা বিশ্বব্যাপী তান্ডব চালাচ্ছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশেও করোনার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। মনে করার কোন কারণ নেই যে, এখানে করোনার প্রভাব নেই, করোনার প্রভাব আগের মতোই রয়েছে। এখানকার লোকজনের এখনো করোনার বিষয়ে সচেতনতা আসেনি। তার মধ্যে রাস্তার মাঝে বাজারটি এখন বড় বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। আরো কিছুদিন থাকার পর বাজারটি সরিয়ে নিলে ভালো হতো বলে আমি মনে করি।