নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের মামলায় কারান্তরীণ বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জামিন শুনানী হবে আজ রবিবার। মুন্সীগঞ্জ সদরের একটি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐ স্কুল শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই শিক্ষকের নাম হৃদয় মন্ডল। তিনি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয় পড়ান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত সোমবার ৪ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১ তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে আজ রবিবার আবার শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জামিন শুনানী হবে বলে জানা গেছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবীর সভাপতি এ্যাড. অজয় চক্রবর্তী এ খবর নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, গত ২২ মার্চ শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে তার ভাড়া বাসা থেকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। ওইদিন রাতেই বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিশিয়ান মো. আসাদ বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় হৃদয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ২০ মার্চ পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় মন্ডল। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে প্রাসঙ্গিকভাবে ইসলাম ধর্ম বিষয়েও কথা বলেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তার বক্তব্য রেকর্ড করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ নিয়ে অসন্তোষের জেরে স্কুল ছুটির পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত আবেদন দেয় শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ হৃদয় মন্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একটি পক্ষের অসন্তোষের জেরে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ বিষয়টি সমঝোতার সমাধান না মেনে ২২ মার্চ ক্লাস বর্জন করে ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জ থানা ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। এরপর হৃদয়কে তার বাসা থেকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মো. মিজান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তার এ ধরনের বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাকিটা তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে। তবে বর্তমানে স্কুলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে ঐ স্কুলের দশম শ্রেণীর কমার্সের ছাত্র জুনায়েদ আল জানান, ঐদিন হৃদয় মন্ডল স্যারের কথোপকথন মোবাইলে রেকর্ড করেছিলো। ঐ দিন শিক্ষক সংঙ্কট থাকার কারণে প্রধান শিক্ষকের অনুরোধে বাংলা ২য় পত্র ক্লাস নিতে যান হৃদয় মন্ডল। সেখানে তিনি বাংলা না পড়িয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়া শুরু করেন। পাশে থাকা বন্ধুর পরামর্শে তার বক্তব্য রেকর্ড করি। এদিকে এ মামলার বাদী আসাদ বলেন, যে ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কেও আমি কিছুই জানিনা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন মামলার বাদী হতে তাই বাদী হয়েছি। এদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আসাদকে মামলার বাদী হতে কে বলেছে তা আমি জানি না। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাথে আলোচনা করেই সবকিছু করা হয়েছে। স্কুল শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের বোন জামাই বাতেন হাওলাদার বলেন, মামলাটি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষকের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ পরিবারটি এখন অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ঐ শিক্ষকের সন্তানরা স্কুলে গেলে তাদের নানা অপবাদ দেয় সহপাঠীরা। তাই তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই মামলাটির দুইবার শুনানী হয়েছে জামিন হয়নি। রবিবার জামিন শুনানী হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল ) মো. মিনহাজ উল ইসলাম বলেন, স্কুল কর্তপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তাই মামলা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার বেনজীর আহমেদ বলেন, বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হৃদয় মন্ডল পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। সবকিছু পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্রের শ্রেণী শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে ঐ ক্লাসে পাঠানো হয়। তিনি ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা করার সময় তার বক্তব্য মোবাইলে রেকর্ড করে এক শিক্ষার্থী। রেকর্ডে কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। তখন হৃদয় মন্ডল ধর্মকে বিশ^াস এবং বিজ্ঞানকে প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান হিসাবে ব্যাখ্যা করেন।