নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীনগরের বেশিরভাগ টেইলার্সের মালিক ও ক্রেতারা করোনার ভয় বা লকডাউন ঘোষণা থাকলেও এসব কিছুই মনে করছে না। দোকানের সামনে লেখা আছে নো মাস্ক, নো সার্ভিস। কিন্তু এসব লেখা কোন কাজেই আসছে না। সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীনগরে ছোট বড় টেইলার্সের কারিগররা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঈদের এখনও প্রায় এক সপ্তাহ বাকি থাকতেই তারা অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে ছিট কাপড়ের দোকান থেকে কাপড় কিনে টেইলার্সে টেইলার্সে ঘুরছেন। কিন্তু টেইলার্স মালিকদের হাজার অনুরোধ করেও পাথর গলাতে পারছেন না। স্বপন নামের একজন কারিগর জানান, তিনি শ্রীনগরের একটি বড় টেইলার্সে ১১ বছর ধরে কাজ করছেন। বছরের অন্য সময়ে কাজ একটু কম থাকলেও দুই ঈদ এবং দূর্গা পূজার সময় তাদের ব্যস্ততার কমতি থাকে না। এ সময়ে তাদের রোজগারও হয় ভালো। কিন্তু কষ্ট হয় খুব বেশি। কেননা বিশ্রাম নেওয়া তো দূরের কথা সারা রাত জেগে কাজ করতে হয়। এভাবে কাজ করে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবুল কালাম নামের অপর এক কারিগর জানান, কাজের চাপে ৫ দিন হলো বাড়ি যেতে পারেন না। রাতদিন দোকানের কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। সেলাই মেশিন চালাতে চালাতে গভীর রাতে ঘুমের কাছে যখন পরাজিত হচ্ছেন তখন চেয়ার ছেড়ে একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। সেটা বেশি সময়ের জন্য নয়। কারণ দোকানের ঐতিহ্য রক্ষার্থে সময়মত অর্ডারী পোশাক সাপ্লাই দিতেই হবে। মদিনা টেইলার্সের সত্ত্বাধিকারী মোঃ জাকির হোসেন জানান, তার দোকানে মোট ১০ জন কারিগর কাজ করেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর কাজের চাপ বেশি। ৫ দিন আগে থেকে সকল ধরনের অর্ডার নেয়া বন্ধ। যে অর্ডার নিয়েছেন তাদের পোশাক তৈরী করে দিতে কারিগরদের সাথে তিনি নিজেও সারারাত জেগে কাপড় কাটছেন। তিনি জানান, সব ধরনের পোশাক তৈরীর অর্ডার নিয়েছেন। তবে বিভিন্ন মডেলের পাঞ্জাবীর কাজটাই তিনি বেশি নিয়েছেন। ঈদ সামনে রেখে নিজেদের পছন্দমত পোশাক বানাতে তরুণ-তরুণীদের অনেকেই এবার কিনছেন গজ কাপড়। এরপরেই ছুটছেন দর্জির দোকানে। আর ঈদকে কেন্দ্র করে অর্ডারের চাপে দর্জিপাড়ার ব্যস্ততাও বেড়েছে বেশ। শ্রীনগরে বিভিন্ন মার্কেট ও মলে দর্জির দোকান ও টেইলারিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে তুমুল ব্যস্ততার ছবিই চোখে পড়েছে। এছাড়া পাড়া-মহল্লার দর্জি দোকানগুলোতেও কাপড় সেলাইয়ের প্রচন্ড ব্যস্ততা দেখা গেল। নিয়মিত কাস্টমার ছাড়া পোশাক তৈরির অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। দর্জির দোকানগুলোতে রাতদিন চলছে সেলাই মেশিনের চাকা। কর্মীদের কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ বোতাম লাগাচ্ছেন, কেউবা কাপড় ইস্ত্রি করছেন। এভাবে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। দর্জি দোকানে অর্ডার দিতে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, ঈদ এলেই টেইলার্সের মজুরি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ‘অর্ডার নেবে না, নেবে না’ বলে বেশি মজুরির আশায় পরে ঠিকই অর্ডার নেয় তারা। জাহাঙ্গীর টেইলার্সের মালিক বলেন, ঈদে সরকারি-বেসরকারি সব চাকুরিজীবী বোনাস ও বাড়তি ভাতা পান। আমাদেরও ঈদে কর্মীদের বেতন বোনাস দিতে হয়। তারা রাতদিন পরিশ্রম করে। এজন্য সেলাইয়ের মজুরি একটু বেশি ধরা হয়। ঈদের সময় সমাজের মধ্যবিত্তরা বেশিরভাগ তাদের দোকানে উপচে পড়া ভিড় করে থাকেন। তারা কাপড় কিনে ইচ্ছেমত নকশা ও ডিজাইনের পোশাক তৈরী করে থাকেন। এ বছর তাদের টেইলার্সে অনেক ভিড়। এখন আর অর্ডার নিচ্ছেন না। তারপরও ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেককে না করতে পারছেন না। যে কারণে দোকানের কারিগরসহ সকলকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। এমন অবস্থা ঈদের আগের রাত পর্যন্ত চলবে। এ সময়টাতে তাদের কষ্ট হয় বেশি। কিন্তু নিজেদের তৈরী করা নানা ডিজাইনের পোশাক কাস্টমারদের হাতে তুলে দেয়ার মধ্যে অন্য রকমের এক আনন্দও রয়েছে।