নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর উত্তরা শিন শিন জাপান হাসপাতালে কর্মচারীদের মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে করোনা রোগী সবুজ পিরিচ (৩২) পরবর্তীতে ৩ দিন ঢাকা গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত সোমবার রাতে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের শুলপুর গ্রামের মৃত সেন্টু পিরিচের ছেলে সবুজ পিরিচের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উত্তরা হাসপাতাল থেকে লাশ হয়ে ফিরল সবুজ পিরিচ। উত্তরা থানার মামলার এজাহার অনুযায়ী, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন সবুজ পিরিচ ওইদিন রাত দেড়টায় ধারালো ছুরি নিয়ে চিকিৎসাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে মিতু রেগো এবং ইমনা আফরোজ নামে দুই নার্স এবং সাগর নামে এক ওয়ার্ডবয় গুরুতর আহত হন। সবুজ পিরিচের স্ত্রী লাবণী সাংবাদিকদেরকে বলেন, গত ১৮ জুলাই তার স্বামীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এজন্য তারা হাসপাতালে যান। দ্রুততম সময়ে রোগীকে আইসিইউতে নিতে হবে বলে জানানো হয়। একপর্যায়ে চিকিৎসক জানান, রোগীকে বাঁচাতে হলে ৮০ হাজার টাকা দামের একটি ইঞ্জেকশনও দিতে হবে। আইসিইউতে ভর্তি অবস্থায় ওই ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরপরই রোগী বিকারগ্রস্থ আচরণ শুরু করে। একজন আইসিইউর রোগী কিভাবে তিনজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহত করতে পারে ? উত্তরা শিন শিন জাপান হাসপাতালে কর্মচারীদের নির্যাতনে মানুষের সামনে হাত-পা বেঁধে হাত-পা ভেঙ্গে গুরুতর আহত করা হয়েছিল আমার স্বামীকে। গত শুক্রবার হাসপাতাল থেকে দুপুরে সবুজ পিরিচের লাশ সিরাজদিখান শুলপুরের বাড়িতে আনা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবারের একমাত্র ছেলে সদস্যকে হারিয়ে দিশেহারা এখন পরিবারটি। আইসিইউতে ভর্তি করোনা রোগী সবুজ পিরিচকে নির্যাতনের পর কয়েক ঘন্টা রাজধানীর উত্তরা শিন শিন জাপান হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্ত্রী লাবনী। শুলপুর গ্রামের শুলপুর খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ সমিতির সভাপতি সজল পিরিচ জানান, সবুজ পিরিচকে হাত-পা বেঁধে ভেঙ্গে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়। যার ফলে সবুজের অকাল মৃত্যু হল। আমরা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। নিহত সবুজের মা সুমতি পিরিচ বলেন, পাষন্ডরা মধ্যযুগীয় নির্যাতনে আমার সবুজকে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়। আমার সবুজকে ওরা চুল ছিঁড়ে, পিটিয়ে, ছ্যাঁকা দিয়ে নির্মমভাবে মেরে ফেলেছে। আমার সবুজ করোনা থেকে বাঁচতে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আমার বুকের মানিককে ওরা মেরে ফেলেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই। সবুজ পিরিচের শ^শুর জ্যোতি কস্তা সাংবাদিকদেরকে বলেন, গত ১৮ জুলাই তার একমাত্র মেয়ের জামাই সবুজ পিরিচের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এজন্য তারা রাত তিনটায় ঢাকা উত্তরা শিনশিন হাসপাতালে যান। দ্রুততম সময়ে রোগীকে আইসিইউতে নিতে হবে বলে জানানো হয়। একপর্যায়ে চিকিৎসক জানান, রোগীকে বাঁচাতে হলে এক্ষুনি ৮০ হাজার ৮ শত টাকা দামের একটি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। আইসিইউতে ভর্তি অবস্থায় ওই ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরপরই রোগী বিরূপ আচরণ শুরু করে। এছাড়া প্রতিদিনের জন্য ওষুধের খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকার বিল দেওয়া হয়। শুরু থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পরীক্ষা চিকিৎসার নামে সকালে বিকালে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। করোনা রোগী বলে রোগীর সাথে দেখা করতে দিতেন না। তিনি আরও বলেন, উত্তরা শিন শিন হাসপাতালে কর্মচারীদের অমানসিক নির্যাতনে আমার একমাত্র মেয়ের জামাই মারা গেছেন। আমি এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।