নিজস্ব প্রতিবেদক
চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের ঢাকা আসার সুবিধার্থে শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। ফলে চলাচল করছে সব ধরনের গণপরিবহন। কিন্তু একদিনের এই শিথিলতায় গণপরিবহনগুলোতে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কলেজগেট থেকে বাংলামোটরের উদ্দেশ্যে লাব্বাইক গাড়িতে ওঠেন হামিদ। তিনি বলেন, সরকার সব গাড়ির ভাড়া ৬০ শতাংশ বেশি নির্ধারণ করেছে। গাড়িতে আজ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকেও বেশি ভাড়া নিচ্ছে। দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। ১৫ টাকার রাস্তা ৩০ টাকা ভাড়া নিয়েছে। এ ব্যাপারে কথা হয় লাব্বাইক গাড়ির চালকের সহকারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, কাল গাড়ি চলাচলের খবর শুনে রাত ১টায় গাড়ি নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে গেছি। সারারাত জেগে বসেছিলাম সকালে যাত্রী নিয়ে আসবো বলে। কিন্তু তেমন যাত্রী নাই। সকালে আমরা থাকা অবস্থায় ঘাটে তিনটা ফেরি এসেছে। তিন ফেরিতে মোট যাত্রী এসেছে ২৫ থেকে ২৬ জন। কাল গাড়ি বের করে আজ পর্যন্ত ৪ হাজার টাকার উপরে খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু যাত্রী পাচ্ছি না। গাড়ি নিয়ে গিয়ে মালিককে টাকা দিতে হবে। কিন্তু পাবো কই। আবার কতদিন গাড়ি চালাতে পারবো না কে জানে। এই জন্যই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছি। সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। সেই সঙ্গে যাত্রীর চাপও কম। বেশ কিছু সময় পরপর একটি দুটি বাস আসছে। যাত্রীর আশায় দাঁড়িয়ে থাকছে । তবে যাত্রী পাচ্ছে হাতেগোনা কয়েকজন। তবে কোনো কোনো বাসে দেখা গেছে দুই সিটে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। আবার বেশিরভাগ গাড়িতে ফাঁকা পড়ে থাকছে সিট। সেইসঙ্গে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার নিয়ম মানা হচ্ছে না। যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। তবে ভাড়া বেশি দিয়েও যাত্রীদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ দেখা যায়নি। যাত্রীদের ভাষ্যমতে ভাড়া একটু বেশি নিলেও রিকশা ভাড়ার তুলনায় অনেকটাই খরচ বেচে যাচ্ছে। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে বিধিনিষেধ আরোপ করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার। ঈদুল আজহা সামনে রেখে ৮ দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। এরপর আবার গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত থাকবে এই বিধিনিষেধ। বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ছিল। খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহন-সংরক্ষণ ও ওষুধ খাত ছাড়া বন্ধ ছিল সব ধরনের শিল্প-কারখানা। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রবিবার (১ আগস্ট) থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দিয়েছে সরকার। এই ঘোষণার পর শনিবার ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। যদিও তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রবিবার কাজে যোগ না দিলেও কোনো শ্রমিকের চাকরি যাবে না। কিন্তু তাদের সেই কথায় ভরসা রাখতে না পেরে ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঢাকা এসেছেন শ্রমিকরা।
একদিন শিথিলের সুযোগে গণপরিবহনে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়
আগের পোস্ট