২৭ অক্টোবর :
পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের আহ্বান শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদরের জীবনমান বৃদ্ধির দাবিতে গত এক মাসের বিক্ষোভে প্রাণ হারান অন্তত ১৭৯ জন
সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরাক
ইরাকের রাজধানী বাগদাদসহ বেশ কয়েকটি শহরে শুক্রবার সরকারি ও ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে জীবনমান উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৪০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় শনিবারও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে তারা। বাগদাদের আল-জামহুর সেতুসংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভরত আন্দোলনকারীরা -রয়টার্স
প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি সরকারের পতন দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশ ও ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শুক্রবার একদিনেই অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত এক মাসের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল কমপক্ষে ১৭৯ জনে। এদিকে দেশটির মানবাধিকার হাইকমিশন (আইএইচসিএইচআর) জানিয়েছে, বিক্ষোভ-সহিংসতায় দুই হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় আমারা শহরে সংঘর্ষে সরকারের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী আসাইব আহল আল-হক মিলিশিয়া বাহিনীর এক সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে এবং জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যর্থ রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এ প্রতিবাদ মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটিকে বড় ধরনের সংকটের মুখে ফেলেছে।
বাগদাদের কেন্দ্রস্থল তাহ্রির স্কোয়ারের বিক্ষোভে অংশ নেয়া আলি মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা সবাই চারটি জিনিস চাই। চাকরি, পানি, বিদু্যৎ ও নিরাপত্তা। এগুলোই আমরা চাই।’ পুলিশের কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে ১৬ বছর বয়সি এ কিশোরের মুখমন্ডল একটি টি-শার্টে ঢাকা ছিল। এদিন বাগদাদে তরুণ বিক্ষোভকারীদের ‘প্রাণ ও রক্ত দিয়ে ইরাক তোমাকে রক্ষা করব’ স্স্নোগানের মধ্যেই পুলিশকে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে দেখা গেছে।
চলতি মাসের মাঝামাঝিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধারাবাহিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১৫৭ জন নিহত ও ছয় হাজারের বেশি আহত হয়েছিল। আইএইচসিএইচআর জানিয়েছে, শুক্রবার কেবল বাগদাদেই পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টারে পাঁচ বিক্ষোভকারীসহ অন্তত আটজন নিহত হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা দক্ষিণের নাসিরিয়া শহরে মিলিশিয়া বাহিনী আসাইব আহল আল-হকের (এএএইচ) একটি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে ইরান সমর্থিত এ গোষ্ঠীর সদস্যরা পাল্টা গুলি ছুড়লে আরও অন্তত ৯ জন নিহত হন। আমারায় এএএইচের এক সদস্য ও এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। তেলসমৃদ্ধ বসরায় তিন বিক্ষোভকারী, হিলা ও সামাওয়াতে আরও দুইজনের মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা সূত্রগুলো।
দিওয়ানিয়া শহরে আগুন লাগিয়ে দেয়া একটি ভবনের ভেতর আটকা পড়ে ১২ বিক্ষোভকারীর মৃতু্য হয়েছে বলে পুলিশের বিভিন্ন সূত্রের পাশাপাশি হাসপাতালের মর্গের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভবনটির ভেতরে ইরান সমর্থিত বদর অর্গানাইজেশনের স্থানীয় কার্যালয় ছিল বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম। ভেতরে অন্য বিক্ষোভকারীদের উপস্থিতির বিষয়টি না জেনেই একদল বিক্ষোভকারী ভবনটিতে আগুন দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবারের সহিংসতায় ইরাকজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৬৮ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালিদ আল-মুহানা জানিয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে দেয়া এক ভাষণে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আবদুল মাহাদি ‘সহিংসতা সহ্য করা হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সরকারের পতন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ইরাককে আরও টালমাটাল পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। বিক্ষোভ সামলাতে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করা প্রভাবশালী শিয়া নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুলস্নাহ আলি আল-সিসতানি জুমার খুতবায় সব পক্ষকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে অব্যাহত গণবিক্ষোভের মুখে সম্প্রতি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদর। এক বিবৃতিতে সরকারকে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান তিনি। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আইনপ্রণেতাদের পার্লামেন্ট অধিবেশন বয়কটের আহ্বান জানান এ শিয়া নেতা।
উলেস্নখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মসংস্থানের সংকট, নিম্নমানের সরকারি পরিষেবা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাগদাদের রাজপথে নামেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের অনুসারী না হয়েও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের আওয়াজ নিয়ে রাজপথে নামেন আন্দোলনকারীরা। নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালিয়ে তাদের ওপর চড়াও হলে এই বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে, ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন শহরে। বিশেষ করে শিয়া অধু্যষিত দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারি বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও গুলিবর্ষণের ফলে ১৪৯ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। একই মত জাতিসংঘেরও। এর মধ্যেই শুক্রবার নতুন করে প্রাণহানির ঘটনা