নিজস্ব প্রতিবেদক : কঠোর নজরদারিতেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চোরাকারবারীরা সক্রিয়। যদিও বিগত ৬ মাসে শাহজালাল বিমানবন্দরে রেকর্ড পরিমাণ স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ হয়েছে। ধরা পড়েছে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ও একর্শ কেজি স্বর্ণ। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত এই টাকা ও স্বর্ণ জব্দ করা হয়। বিমানবন্দর কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বর্ণ ও টাকা পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার হতো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে কঠোর নরজদারির আওতায় আনা হয়। ফলে বিপাকে পড়ে চোরাকারবারীরা। বিমানবন্দর কাস্টমস থেকে শুরু করে এভিয়েশন সিকিউরিটিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা নজিরবিহীনভাবে নজরদারি জোরদার করে। বিশেষ করে মুদ্রা পাচার, সোনা পাচার রোধে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, শুল্ক গোয়েন্দা নজরদারি অন্যান্য যে কোনো সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই নজরদারির মধ্যেও চোরাকারবারীরা বিভিন্নভাবে দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকারও বেশি জব্দ হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জব্দ সৌদি রিয়াল (১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫১০ রিয়াল)। তাছাড়াও জব্দের তালিকায় আছে ৫৩ হাজার ৩০৫ ইউরো, ১ হাজার ৩৭০ ব্রিটিশ পাউন্ড, ৪ হাজার ৭৮৬ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৫ ইউএই দিরহাম, ৫৩০ ওমানি রিয়াল, ১০ সিঙ্গাপুর ডলার, ২১০ জর্ডান দিনার, ৪৯ হাজার ৮১৮ মার্কিন, ৫৬০ কুয়েতি দিনার, ১ হাজার ৫০ ব্রুনায়, ১০ চাইনিজ ইয়েন, ৩২০ থাই বাথ, ১৫৩ কাতার রিয়াল এবং ১০ লাখ ১৭ হাজার বাংলাদেশি টাকা। গত ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫১০ সৌদি রিয়াল পাচারের চেষ্টা হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল সৌদি এক রিয়ালের বাংলাদেশি মুদ্রার হার ছিল ৩২ টাকা ৫৫ পয়সা। ওই হিসাবে বাংলাদেশি টাকায় ৪ কোটি ৭৭ লাখ ২ হাজার ৩৫০ টাকা। তারপরের অবস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিরহাম। ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৫ দিরহামে বাংলাদেশি মুদ্রায় অর্থাৎ প্রতি দিরহামে ৩৩ টাকা ৩৪ পয়সা হারে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫৪ হাজার ৬১০ টাকা। মালয়েশিয়াতেও পাচারের চেষ্টা হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ২৭ টাকা ৬০ পয়সা রেটে ১ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৩৬০ টাকা। তাছাড়া ওই দুই দেশের মুদ্রার পাশাপাশি মার্কিন ডলার, ইউরো, পাউন্ড ও কুয়েতি দিনারের পাচার চেষ্টা করা হয়। বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি বাংলাদেশি ১০ লাখ ১৭ হাজার টাকাও জব্দ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সর্বশেষ গত মার্চে জব্দ করা হয় ৩ লাখ ৯৬ হাজার সৌদি রিয়াল, ১৭ হাজার ৯৫০ ইউরো, ১ হাজার ৩৭০ ব্রিটিশ পাউন্ড, ৪ হাজার ৭৭১ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। আর ফেব্রুয়ারিতে জব্দ হয় ১ লাখ ৭ হাজার ২৬০ সৌদি রিয়াল, ২ হাজার ৪৩০ ইউএই দিরহাম, ৩ কাতার রিয়াল, ৫ ওমানি রিয়াল, ১০ সিঙ্গাপুর ডলার, ২১০ জর্ডান দিনার, ১৮ মার্কিন ডলার, ৩৫ হাজার ৩৫৫ ইউরো। যদিও বছরের শুরু জানুয়ারি মাসে বিদেশি মুদ্রা ধরা পড়ার ঘটনা শূন্য। তার আগের মাসে ডিসেম্বরে ১ লাখ ৯২ হাজার ২৫০ সৌদি রিয়াল, ২৪০ ইউএই দিরহাম ও ১৫০ কাতার রিয়াল জব্দ করা হয়। আর নভেম্বর মাসে ৪৯ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার, ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল, ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৫ ইউএই দিরহাম, ২৭৫ ওমানি রিয়াল, ১ লাখ বাংলাদেশি টাকা এবং অক্টোবরে ৫৬০ কুয়েতি দিনার, ৫ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল, ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৮০ ইউএই দিরহাম, ২৫০ ওমানি রিয়াল, ১৫ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ১ হাজার ৫০ ব্রুনায়, ১০ চাইনিজ ইয়েন এবং ৩২০ থাই বাথ জব্দ করা হয়।
এদিকে সার্বিক বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন জানান, বিমানবন্দরে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গ্রহণ করা হয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। সব কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তাছাড়াও এভসেকসহ অন্যান্য সংস্থাও এ ব্যাপারে সহায়তা করছে। মূলত বিমানবন্দরে সব সংস্থা মিলে একটি টিমের মতো কাজ করে থাতে। আর এ কারণেই চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধ কমে আসছে।