নিজস্ব প্রতিবেদক
‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ অতি পরিচিত এই লাইন দুটি কাজী নজরুল তো কবেই লিখে গেছেন। তবুও পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা আজ অবহেলিত, শোষিত। গত শনিবার শ্রীনগর উপজেলার বেজগাঁও যাত্রী ছাউনীর সামনে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে মা-মেয়ে। ২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য যেতে হবে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু মহিলার সিট খালি নাই বলে গাড়িতে উঠতে পারছে না। হুড়োহুড়ি করে গাড়িতে উঠতে গিয়েও বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। আফসোস যে নারী জাতি এত কষ্ট করে জন্ম দেন একটি ফুটফুটে বাচ্চা, আলো দেখান এই সুন্দর পৃথিবীর, আজ তারাই নিরাপদভাবে চলাফেরা করতে পারে না।
কথা হলো মা আমেনা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, আমার ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করে শিক্ষক হবো। ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষালাভের সুযোগ হয়নি। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল তাও সম্পূর্ণ পরিবারের পছন্দে। গ্রামের আর দশজন সাধারণ নারীর মতোই রান্নাবান্না, বাড়ির কাজে ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটে আমেনা বেগমের। আমেনা বেগম বলছিলেন, এ জীবন তার কাছে অনেকটাই পরাধীন। কেননা নিজের পছন্দ বা ইচ্ছামতো কাজ বা সময় কাটানোর সুযোগ তার খুব একটা হয়নি।
আমেনা বেগমের উপলব্ধি হলো, আজকে যদি আমি একটু পড়ালেখা করে একটা চাকরি করতাম তাহলে তো এই সমস্যা থাকতো না। তিনি চান না তার মেয়ের জীবন তার মত হোক। তিনি তার নিজের না পারা ইচ্ছেগুলোকে মেয়ের মাধ্যমে পূরণ করতে চান। তিনি চান তার মেয়ে বড় শিক্ষক হবে। কিন্তু তাকে এখনই ভাবতে হচ্ছে মেয়ের যাতায়াত করা নিয়ে। কিভাবে প্রতিদিন তার মেয়ে ঢাকা গিয়ে ক্লাস করবে। মেয়েদের জন্য তো এখনো যাতায়াত ব্যবস্থা নিরাপদ না।
প্রতিনিয়ত নারীকে ঘরে-বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। যেমন- নগরে নারীর একা চলাচলে নিরাপত্তার অভাব, যানবাহনে চলাচলে নিরাপত্তাহীনতা, প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অনিশ্চয়তা নারীর স্বাধীন চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করছে। এছাড়া অন্যান্য গণপরিবহনেও যাতায়াতকালে নারীরা অসম্মানজনক আচরণেরও শিকার হচ্ছেন। শুধু পরিবহন শ্রমিক, চালক, সহকারী নন, কখনো কখনো পুরুষ যাত্রী দ্বারাও এ ধরনের যৌন সহিংসতার শিকার হতে হয় নারীদের।