নিজস্ব প্রতিবেদক
‘মানুষ মানুষের জন্য’ জীবন জীবনের জন্য’ এই স্লোগান বুকে ধারন করে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলসভাবে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীনগরের দুই চিকিৎসক।
সাহস আর আত্মবিশ্বাস সাথে নিয়ে করোনা (কভিড-১৯) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ২ জন ডাক্তার। এদের মধ্যে একজন শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়নের কৃতী সন্তান ডাঃ শেখ নাজমুল ইসলাম জনি, যিনি ‘ঢাকা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল’ এর কোভিড ডেডিকেটেড ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) তে কর্মরত রয়েছেন।
করোনা প্রতিরোধে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য’ জীবন জীবনের জন্য’ এটা মনে করেই ছোটবেলা থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আর আজ এই করোনা মহামারী দুর্যোগে একজন ডাক্তার হয়ে আমি নিজের জীবনের মায়ায় ঘরে বসে থাকতে পারিনা। আমি বর্তমানে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ‘কভিড-১৯’ আইসিইউতে আছি যেখানে সবাই ‘করোনা পজিটিভ পেশেন্ট’। ইতিমধ্যেই দেশে করোনা রোগীর সেবাদানকারী অনেক ডাঃ আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ আবার মারাও গেছেন, তবুও আমি এখানে করোনা রোগীদের সেবা অব্যাহত রেখেছি। আমাকে অনেকেই বলে তোমার জীবনের এতটা ঝুঁকি নেওয়ার কি দরকার ছিল? সত্যি বলতে আমি ভয় পাইনা, আসলে ডাক্তারদের ভয় পেতে নেই। আর ভয় পাইনা বলেই মৃত্যুর পরোয়া না করে দিন-রাত পরিশ্রম করে করোনা রোগীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য। আমি যেন আমার সেবা অব্যাহত রাখতে পারি।
করোনা মোকাবেলায় শ্রীনগরের আরেক প্রতিভাবান ও স্বনামধন্য মুখ কুকুটিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নওপাড়া গ্রামের কৃতী সন্তান ডাঃ রাশেদুল হাসান রাশেদ। করোনা মোকাবেলায় তার অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাক্তারদের ধর্মই হল রোগীর সেবা করা। আমি ঢাকা মেডিকেলে কর্মরত আছি। ‘ঢাকা মেডিকেল’ করোনা রোগীদের জন্য ইদানিং বরাদ্দ করা হয়েছে, যদিও এখনো রোগী ভর্তি শুরু হয়নি। বর্তমানে আমরা করোনা রোগী ডায়াগনোসিস করে কুর্মিটোলা পাঠিয়ে দিচ্ছি। সবাই জানে করোনা একটা ভয়াবহ ভাইরাস। তাই বর্তমানে এর সংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজই ডাক্তারদের জন্যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নিজ দেশের এই মহা দুর্যোগে করোনা মোকাবেলায় একজন সহযোদ্ধা হতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। ডাঃ রাশেদ আরো যোগ করেন, মুন্সীগঞ্জে ইতিমধ্যেই এখন পর্যন্ত ৭০ এর উপরে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং আমাদের শ্রীনগর উপজেলায় ৯ জন। করোনার ভয়াবহতা কমাতে আমি চাচ্ছিলাম বিক্রমপুরের মানুষের যারা করোনা আক্রান্ত ও করোনা উপসর্গ যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের সেবায় শ্রীনগরে একটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করার জন্যে। ইতিমধ্যেই আমি বিভিন্ন সমাজসেবক ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। যদি সবাই এগিয়ে আসেন তাহলে এটা খুব দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় আমাদের জনগণের উচিত সরকারি আইন মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বাহির না হওয়া, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং জনসচেতনতা বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমেই করোনা (কভিড-১৯) কে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।