নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা মহামারীর মধ্যেই জাতীয় সংসদের বাজেট ও অষ্টম অধিবেশন নিয়ে এমপি ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কিন্তু বাজেট অধিবেশনের মতো গুরত্বপূর্ণ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই ভয় নিয়েই অধিবেশনে যাবেন স্বল্প সংখ্যক এমপি, মন্ত্রী। সংসদে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বুধবার (১০ জুন) বিকেল ৫টায় বাজেট অধিবেশন শুরু হবে। বাজেট উপলক্ষে সংসদের কর্মকর্তাদের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার পর ৮ জুন পর্যন্ত ৪৩ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। তারও আগে সংসদ সচিবালয়ে দায়িত্বরত ৮২ জন ব্যাটালিয়ন আনসার ও তিনজন পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত ৮ জন মন্ত্রী-এমপিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সবার মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।
তবে সংসদের এই অষ্টম অধিবেশন ঘিরে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। অধিবেশনের কার্যদিবস যথাসম্ভব স্বল্প করে মাত্র ১২টি করা হয়েছে। মুলতবি দিয়ে ৮ অথবা ৯ জুলাই পর্যন্ত চলতে পারে অধিবেশন। বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। এমপিরা যাতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধিবেশনে বয়স্ক এমপিদের না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে বিএনপির এমপিদের এ ব্যাপারে সংসদ থেকে কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আইনজীবী রুমিন ফারহানা।
বুধবার তিনি বলেন, ‘এই সংসদ অধিবেশন নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। সংসদের অধিবেশন কক্ষ একটি বন্ধ কক্ষ। সেখানে বাইরের আলো বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই। সেন্ট্রাল এসিতে চলে। এজন্য আমি ভার্চুয়াল অধিবেশন করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু সেটা গ্রহণ করা হয়নি। তারা সংবিধানের কথা বলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বলে একটা কথা আছে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে অধিবেশন চালানো যেত।
মন্ত্রী, এমপি ছাড়াও সংসদের অনেক কর্মকর্তা অধিবেশন নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। তাদের মন্তব্য, সরকারি চাকরি করি। আদেশ তো মানতেই হবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, দেশের স্বার্থেই কাজ করতে হবে।
জানা যায়, অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক বসবে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অধিবেশন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বুধবার (১০ জুন) বাজেট অধিবেশন শুরুর পর অধ্যাদেশ উত্থাপন হবে। তারপর আনা হবে শোক প্রস্তাব। রাজধানীর ডেমরা-দনিয়া-মাতুয়াইল আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লা মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা ও তা গ্রহণের পর সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেল ৩টায় অধিবেশন শুরু হবে। এরপর বাজেট ও অর্থ বিল উত্থাপন হবে। ১২ ও ১৩ জুন সংসদের বৈঠক মুলতবি রাখা হবে। ১৪ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা। এদিন থেকে প্রতিটি কার্যদিবস সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলবে। ১৫ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা, নির্দিষ্টকরণ সম্পূরক বিল পাস। ১৬ জুন ও ১৭ জুন মূল বাজেটের ওপর আলোচনা। ১৮ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি। ২২, ২৩ ও ২৪ জুন বাজেটের ওপর আলোচনা। ২৫ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি। ২৯ জুন বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা এবং অর্থবিল পাস। ৩০ জুন মূল বাজেট, ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস। ৮ অথবা ৯ জুলাই অধিবেশন সমাপ্তি।
প্রসঙ্গত, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হবে। মোট আয় তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। মোট ঘাটতি এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।