নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে চলছে সরকারি অফিস। সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে চলছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। তবে এরমধ্যে সচিবালয়ে চলছে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। রোববার (২৮ জুন) সকাল থেকে সচিবালয় ঘুরে মন্ত্রণালয়গুলোর কাজের পরিস্থিতি ও উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর গেটের মাঝখানে দর্শনার্থী কক্ষে কোনো ভিড় ছিল না। কারণ দর্শনার্থী প্রবেশ মার্চ মাসেই বন্ধ করে দেয়া হয়। সচিবালয়ে কর্মরত যারা এখান দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করছিলেন তাদের তাপমাত্রা মাপতে দেখা যায়নি। সচিবালয়ের গাড়ি রাখার স্থানগুলো অন্য সময়ের মতো পূর্ণ থাকলেও বিভিন্ন ভবন ঘুরে খুব অল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা গেছে। বেশিরভাগ ভবনের করিডোরগুলো খাঁ খাঁ করছে। বেশিরভাগ কক্ষই ফাঁকা। ৪ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলায় ২২৬ নম্বর কক্ষটি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রেরণ ও গ্রহণ শাখা। বেলা ১১টার দিকে এই কক্ষে পাঁচজনের বসার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে একজন অফিস করছিলেন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সপ্তাহে তিনদিন অফিস করে থাকেন। অফিসের দিনগুলোতেও কর্মকর্তারা ছাড়া অন্যরা খুব একটা থাকেন না। যারা অফিস করছেন সবার মুখে রয়েছে মাস্ক। অনেকে গ্লাভস পরে আছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমি সপ্তাহে দুই থেকে চারদিন অফিস করি। অন্যদেরও একই অবস্থা। কেউ বাসায় বসেই কাজ করেন। খুব প্রয়োজন থাকলে প্রতিমন্ত্রী আসেন। মোট উপস্থিতি ৩০ শতাংশের বেশি হয় না। আগে তো বাঁচতে হবে, তারপর না চাকরি। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও অনেকটা এভাবেই অফিস হচ্ছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে রুটিন করে দেয়া হয়েছে, কোন শাখার কোন কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী কবে কবে অফিস করবেন। রুটির অনুযায়ী স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করে থাকেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, কক্ষগুলোর সামনে জুতা জীবাণুমুক্ত করার ট্রে রয়েছে। চার নম্বর ভবনের মাঝামাঝি প্রবেশের স্থানে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন বসানো হয়েছে। ভবনগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ সেতুগুলো বিভিন্ন জায়গায় আটকে দেয়া হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর ভবনের সংযোগ সেতু ৭ নম্বর ভবনের অংশে আটকে দেয়া হয়েছে। ৫ ও ৬ নম্বর ভবনের সংযোগ সেতু ৬ নম্বর ভবনের দিকে আটকে দেয়া হয়েছে। ৩ ও ৫ নম্বর ভবনের সেতু ৫ নম্বর ভবনের দিকে আটকে দেয়া হয়েছে। সচিবালয়ে বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। প্রধান গেট (১ নম্বর গেট) দিয়ে প্রবেশ করেই হাতে ডান দিকে পূর্ব-পশ্চিমমুখী একটি শেড নির্মাণ কাজ চলছে। ৬ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিচতলাসহ বিভিন্ন ফ্লোরে সংস্কার কাজ চলতে দেখা গেছে। ৬ নম্বর ভবনের পেছনে, ক্লিনিক ভবনের সামনে ও পেছনে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। মার্চ মাসের শুরুতে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম ধরা পড়ে। পরিস্থিতি ক্রম অবনতির দিকে যেতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী টানা ৬৬ দিনের ছুটি গত ৩০ মে শেষ হয়। বিভিন্ন শর্ত পালন ও নির্দেশনা মানা সাপেক্ষে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত অফিস খুলে দেয় সরকার। অফিস খোলার বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ আদেশে বলেছে, ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।