নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা আক্রান্তদের আরটিপিসিআর পরীক্ষা কার্যক্রম বা র্যাপিড টেস্ট চালু করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। শনিবার বেলা ১২টায় ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ২য় তলায় অত্যাধুনিক মলিউকিউলার ল্যাবরেটারির উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানু এতে সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আপনারা অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। টেস্টের ক্ষেত্রে ওয়ার্কার যেন সংক্রামিত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে টেস্টগুলো করতে হবে। আবার স্যাম্পলেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং রেজাল্ট কারেক্ট করতে হবে। স্যাম্পল কালেকশনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে ভুল হলে পজিটিভ একজন মানুষ কিন্তু নেগেটিভ হতে পারে। সব রেজাল্ট ঠিক হলো কিন্তু একজনের নামের জায়গায় আরেকজনের নাম চলে এলো তখনও ভুল হতে পারে। সবকিছু স্বীকার করেই যত্ন নিয়ে কাজ করতে হবে। টেস্টের পাশাপাশি গবেষণায় জোর দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কোভিড নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। ল্যাবরেটরিতে শুধুমাত্র রুটিন টেস্ট হবে না, গবেষণাও হবে বলে আমি আশা করছি। অনুজীব বিজ্ঞানী ডা. বিজন কুমার শীল বলেন, জানুয়ারি মাসে যখন আমরা কাজ শুরু করি তখনই আমাদের এই ল্যাবরেটরির পরিকল্পনা ছিলে। এখন আমাদের ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। সমস্ত মেশিনারিজ চলে আসছে। বলে রাখি, ২০০৩ সালে করোনাভাইরাসের পিসিআর টেকনিকটি সিঙ্গাপুরে আমরা তৈরি করেছিলাম। এরপরে যখন এটা হারিয়ে গেলো তার পরে আর কোন হয়নাই। পরে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস যখন আবার ফিরে এলো পিসিআরই একমাত্র টেস্ট হলো করোনাভাইরাস ডিটেক্টশনের জন্য। আমরা মূলত স্রোতধারার সঙ্গে আজকে মিলিত হতে যাচ্ছি। র্যাপিড কিট টেস্টের গবেষক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. ফিরোজ আহমেদ বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন ২০০টি টেস্ট করতে পারবে। আমরা চেষ্টা করব যাতে আমাদের টেস্টে কোয়ালিটি খারাপ না হয়, নির্ভুল হয়। আমরা চেষ্টা করেছি প্রাইভেট হাসপাতালে যে দামে টেস্টটি করানো হয়, এখানে তার চেয়ে কমে করাতে। আশা করি এখান থেকে টেস্ট করে কেউ বলবে না, যে আমি ভুয়া টেস্টের শিকার হয়েছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, টেস্টের পাশাপাশি আমরা গবেষণায় মনোযোগী হচ্ছি। আমরা ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি গবেষণার জন্য। আর আমরা সর্বোচ্চ কোয়ালিটি মেইনটেইন করছি। কোভিড টেস্ট কেলেঙ্কারির জন্য সরকার দায়ী উল্লেখ করে তিনি হলেন, এটার জন্য সরকার দায়ী। সরকারের অপরিণামদর্শীতা, চিন্তা না করে কথা বলা ও কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নেয়া, এসব ভুলের কারণে এ অবস্থা। আজ থেকে দুই মাস আগে চায়না যখন ভ্যাক্সিন ট্রায়াল করতে চাইলো, আমি বললাম আজকেই করেন। তাহলে কি আমার দেশের লোকেরা উপকৃত হত। তার চেয়ে লাভ হতো, আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি পেত, আমার দেশের লোকেরা শিখে নিতে পারত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে নাম করেছে তার ওষুধ নীতির কারণে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে পৃথিবীতে নাম করত যদি এন্টিবডি টেস্টের অনুমতি দিত। এসময় তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বলা হয়, র্যাপিড টেস্ট করতে বাইরের একজন রোগীকে গুনতে হবে ৩ হাজার টাকা। আর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যাদের স্বাস্থ্যবীমা আছে তাদের দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লাগবে। আরও জানানো হয়, করোনা র্যাপিড টেস্টে ফলাফল প্রতি ৮ ঘন্টার মধ্যেই দেয়া হবে। তবে সেক্ষেত্রে যিনি টেষ্ট করবেন তাকে সকাল ১১টার মধ্যেই গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আসতে হবে। এর আগে সকালে ১১টায় র্যাপিড টেস্টের উদ্বোধন উপলক্ষে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের গেরিলা কমান্ডার মেজর এটিএম হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানু এতে সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল, র্যাপিড কিট টেস্টের গবেষক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. ফিরোজ আহমেদ প্রমুখ।