লায়ন মোঃ আবুল খায়ের খান
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তের ভয়ে আতঙ্কিত ও প্রকম্পিত হাজারো অধিক কোটি মানুষগুলো এবং দিশেহারা পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানগণ। নিরাময়ের পথ খুঁজতে অস্থির বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসাবিদ ও গবেষকগণ। ঠিক তখনই মা, বোন, স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর, শাশুড়ি, আত্মীয়স্বজন ও পরিবার পরিজনের এবং আপনজনের সকল মায়া ত্যাগ করে অসীম শক্তি সাহস ও প্রবল মনোবল নিয়ে ডাক্তার হিসেবে নিজের দায়িত্ববোধ এবং দায়বদ্ধতা থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে আজ করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত অসহায় ও নিঃস্ব মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ডাক্তার নাঈম। দেশ ও মানবসেবায় নিজেকে উজাড় করে দিতে গিয়ে সন্তানের বাবা ডাক, স্ত্রীর অনুভূতির চোখের জল, মায়ের স্নেহভরা ভালবাসা, বাবা হারা বোনের কান্না, শ্বশুর শাশুড়ির আদরমাখা মমতা এবং স্বজনদের আর্তনাদ কোনটাই দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা থেকে দমিয়ে রাখতে পারে নাই ডাঃ নাঈমকে। পত্র পত্রিকা মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ যেসময় অনেক ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী দায়িত্ববোধ থেকে দূরে সরে গিয়েছে আবার অনেক ডাক্তারই কৌশলে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে সরে থাকতে চাইছে। অপ্রতিরোদ্ধ এই মরণব্যাধি যাকে ধরে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন এমনকি সমাজ থেকেও। যার কাছ থেকে নিরাপদ নয় ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মিডিয়া কর্মীরা। নির্ঘাত আক্রান্ত হত্তয়ার সম্ভাবনা শতভাগ থাকা সত্ত্বেও দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সহিত এগিয়ে চলছে ডাক্তার নাঈম। তার মনে একটাই প্রত্যাশা অসহায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে। আর সে করোনা যোদ্ধা না হয় আমিই হলাম। ডাক্তার নাঈম তার মাকে উদ্দেশ্য করে একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলে,
“ আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে”
করোনার থাবায় সারা বিশ্ব ও দেশকে যখন লকডাউনের আত্ততায় আনা হচ্ছে এবং মানুষ আড়চোখে করোনা রোগীকে দেখছে এবং অবহেলা করছে সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন জগৎ থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের এই অসুস্থ মানুষগুলোকে সুস্থ জীবন ও আলোকিত জগতে ফিরিয়ে আনতে জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আট দশজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর মত নিজেকে করোনার সম্মুখ যোদ্ধার নেতৃত্বে আসীন করে বীরত্বের ভূমিকায় দ্বার করিয়েছেন ডাক্তার নাঈম। এতে প্রতিটি মুহূর্তে অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন আরেক করোনা যোদ্ধা বাবা (শ্বশুর) যিনি একজন ব্যাংকার। তিনিও করোনার বিষাক্ত সংক্রমণের অর্থাৎ জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনামতে সাহসিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। শুধু তাই নয় বাবার অনুপ্রেরণায় ডাঃ ফেরদৌসী বিনতে খায়ের জ্যোতি ও এই সংকটাপন্ন সময়ে স্বামী ডাঃ নাঈমকে অনুকরণ করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও অসুস্থ রোগীদের পাশে থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডাক্তার জ্যোতির মামাও ডাক্তার নাছির উদ্দিন খোকন কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের করোনা যোদ্ধা। বৈশ্বিক সংকটময় সময়ে একই পরিবারের চারজন করোনা যোদ্ধা। তাদের নিয়ে অর্থাৎ এই গর্বিত সন্তানদের নিয়ে গজারিয়া মুন্সীগঞ্জবাসী এবং দেশ ও জাতি গর্বিত। যদিও প্রানঘাতী করোনা স্তব্ধ ও থমকে দিয়েছে সাড়া বিশ্বের মানবজাতিকে। মানবতার বিপর্যয় ঘটেছে। সারা বিশ্বব্যাপী জনগণ যখন করোনার ভয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় গৃহবন্দী ঠিক সেই মুহূর্তে একই পরিবারের চারজন করোনা যোদ্ধা জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তারা নিজ দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা থেকে পিছু হঠে যাননি। চলমান করোনা মহামারিকে তারা একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র হিসেবে মেনে নিয়েছে। তাদের বিশ্বাস এই যুদ্ধ একদিন শেষ হবেই এবং করোনা যোদ্ধারা বিজয়ী হবেই ইনশাআল্লাহ। যেমনি হয়েছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে, জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে বিজয়ের লাল সবুজ পতাকা এনে দিয়েছিল। সেই উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে দিবারাত্রি অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে করোনা নামক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আর মনের গভীর থেকে মা-বোন, স্ত্রী, সন্তানের কাছে যাত্তয়ার অধীর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে। ডাক্তার নাঈম শুধু কোভিড-১৯ হাসপাতালেই চিকিৎসা দিয়ে ক্ষান্ত হননি তার নিজ এলাকায় অর্থাৎ গ্রাম- বাউশিয়া, গজারিয়া মুন্সীগঞ্জের গরীব ও অস্বচ্ছল অসুস্থ মানুষদের নিয়মিত ফ্রি বা বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে এলাকার জনমনে প্রশংসিত হয়েছে। যা তার বাবা বিশিষ্ট ব্যাংকার শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক মরহুম আলহাজ্ব মোঃ জামাল উদ্দীনের স্বপ্নই ছিল সকল প্রতিকূলতার মাঝে যেন তার ছেলে ডাঃ নাঈম জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে অসুস্থ অসহায় মানুষের পাশে থাকে। আল্লাহ সহায় হবেন ইনশাআল্লাহ। সরকারের সকল ব্যর্থতা কাটিয়ে কঠিন বাস্তবতার নিরীখে সকল ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, ব্যাংকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মিডিয়া কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পিপিই সামগ্রী সরবরাহের কোন বিকল্প নাই। কেবল টেলিভিশন র্নিভর বক্তব্য দেওয়াই কাজ নয়, এই মুহূর্তে করোনা মোকাবেলার জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতেই হবে। একদিকে মানুষের জীবন জীবিকার প্রশ্ন অন্যদিকে মৃত্যুর মিছিল, সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতার কারণে উভয় সংকটে জাতি। কর্মহীন হয়ে পড়েছে এতিম, দুস্থ, গরীব খেটে খাওয়া মজলুম মানুষ। তথাপি আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হবে ইনশাআল্লাহ।
“করোনা যোদ্ধা ডাক্তার নাঈমুল আহছান নাঈম”
আগের পোস্ট