নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের আদারিয়াতলা গ্রামের বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে জমে উঠেছে অবৈধ কারেন্ট জালের উৎপাদনের এই ব্যবসা। বছরের পর বছর ধরে এখানে এ অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবসা এখন জমজমাট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবৈধ কারেন্ট জালের উৎপাদনের এই ব্যবসাটি অনেক ব্যবসার তুলনায় বর্তমানে বেশি লাভজনক হওয়ায় এখন অনেকেই এ ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া এ অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবসার সাথে জড়িত কেউ কেউ আইনের হাতে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বের হয়ে আবারো এ অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। কারেন্ট জাল বন্ধের অভিযানে এখানে সেইভাবে প্রভাব পড়েনি বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাই এই বিষয়টি রহস্যের দানা বাঁধছে বিভিন্ন মহলে। এদিকে এখানকার উৎপাদিত কারেন্ট জাল উঠতি বয়সের যুবকরা রাতের আঁধারে মাইক্রোবাসে করে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে রাতের আঁধারে এখানকার কারেন্ট মাওয়া পৌঁছে দেয়ার সময় একটি মাইক্রোবাসকে সিপাহীপাড়ার পুলিশ গতিরোধের চেষ্টা করে। কিন্তু মাইক্রোবাসটি সেখানে না থামিয়ে বেপরোয়াভাবে চলার চেষ্টা করে। এই সময় পুলিশ মাইক্রোবাসটিকে অনুসরণ করে। এর ফলে মাইক্রোবাসটি মাওয়া না যেয়ে সিরাজদিখানের দিকে চলে যায়। এসময় সিরাজদিখানে পুলিশ মাইক্রোবাসটি আটক করতে সক্ষম হয়। আর সেখান থেকে পুলিশ কারেন্ট জাল উদ্ধার করে। যাদের সেই সময় আটক করা হয় তাদের মধ্যে দুইজনই ছিল আদারিয়াতলা গ্রামের লোক। তারা এই কারেন্ট জালের ব্যবসার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এখানকার বাসাবাড়িতেও তৈরি করা হচ্ছে অবৈধ কারেন্ট জাল এমন অভিযোগ উঠেছে এখান থেকে। এছাড়া এখানে অনেকেই আবার টিনের ছাপড়া ঘর তৈরি করেও সেখানেও অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এখানে অনেকে আবার অবৈধ কারেন্ট জাল পুলিশের ভয়ে রাতেও তৈরি করছেন বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করছেন। এখানকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এ অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে এখানে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিকবার হানা দিয়েও এবং অনেককে গ্রেফতার করে এ অবৈধ কারেন্ট জাল থেকে এখানকার লোকজনকে কোনভাবেই ফেরানো যাচ্ছে না বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাই এ অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন এবং এর ব্যবসা করতে এখানকার কিছু কিছু মানুষ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে শোনা যাচ্ছে। অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবসায় অত্যাধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এর পিছনে ছুটছে। ছোট ছোট জালের মেশিন দিয়ে অধিক লাভের আশায় এখানকার মানুষ অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইদানিং। জানা গেছে, এ আদারিয়াতলা গ্রামের বেশিরভাগ অংশে দেড়’শ কারখানায় বর্তমানে এ কারেন্ট উৎপাদন হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র মতে জানা গেছে। এরমধ্যে মাত্র কয়েকটি কারখানায় ইতোমধ্যে পুলিশ হানা দিয়েছে। আর বাকি অবৈধ কারেন্ট জালের কারখানাগুলো বর্তমানে অধরাই রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এখানকার এক কারেন্ট জাল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অবৈধ কারেন্ট জাল বর্তমানে অনেক ব্যবসা থেকে বেশি লাভজনক। তাই এ ব্যবসায় বর্তমানে অনেকেই ঝুঁকছেন বলে তিনি দাবি করেন। মাঝেমধ্যে পুলিশ এ অবৈধ কারেন্ট জালের কারখানায় হানা দিয়ে জাল জব্দসহ জরিমানা আদায় করে। কিন্তু তাতে অবৈধ কারেন্ট জালের লাভের সিকিভাগ মাত্র ক্ষতি হচ্ছে বলে জাল ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চলে গেলে আবারো সেই মেশিনে যে অবৈধ জাল তৈরি হয় এক ঘন্টায় তা ক্ষতি পুষিয়ে যায় তাদের এমনটি দাবি করা হচ্ছে এখানকার ব্যবসায়ীদের। এ বিষয়ে অনেকের অভিমত হচ্ছে যে, এখান থেকে চিরতরে অবৈধ কারেন্ট জাল বন্ধে প্রশাসনকে জেল জরিমানাসহ সংশ্লিষ্ট কারখানার বিদ্যুৎ লাইন চিরতরে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তাতে কিছুটা ফল পাওয়া যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।