নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় বৃষ্টি আক্তার নামে এক কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তিন সদস্যের কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমান আরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সর্দার মিলন মাহমুদকে প্রধান করে সাথে আরো দুইজন ডাক্তারকে দায়িত্ব দিয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৫ই আগস্ট রবিবার বিকেল ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃষ্টি আক্তার (১৭) নামে এক কিশোরী কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় মারা যায়। কিশোরী বৃষ্টি আক্তার ঢাকা মালিবাগ থানার খিলগাঁও এলাকার মোঃ শহীদের মেয়ে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জুলাই পেটে ব্যাথা অনুভব করলে তাকে কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর ডাঃ মোঃ শিহাব আল মশিউর রহমান আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলে। রিপোর্ট দেখে বৃষ্টি আক্তারের পরিবারকে দ্রুত এপেন্ডিসাইট এর অপারেশন করতে বলেন। অপারেশনের পর তাকে বাড়িতে নিয়ে গেলে গত ১০ আগস্ট পুনরায় পেটে ব্যাথা অনুভব করলে তাকে আবার কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির পর ডাক্তার বলেন, আগের অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশন হয়েছে। সেখানে আরেকটি অপারেশন করতে হবে। পরিবারের লোকজন অপারেশন করতে দ্বিমত পোষণ করলে ডাঃ শিহাব আল মশিউর রহমান বলেন, হাতে বেশি সময় নেই ১ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করতে না পারলে এই রোগী বাঁচানো সম্ভব হবে না। পরিবারের লোকজন তখন ডাক্তারের কথায় রাজি হয়। অপারেশনের পর তারা দেখতে পায় আগের স্থানে অপারেশন না করে অন্য সাইডে অপারেশন করা হয়েছে এবং সেখানে একটি ব্যাগ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা দেখে পরিবারের লোকজন ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে ডাক্তার বলেন, তার একটা টিউমার হয়েছিলো সেটার অপারেশন করতে হয়েছে। তখন বৃষ্টির পরিবারের লোকজন জানতে চায় আগের অপারেশনটা কিজন্য করা হয়েছে ? এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ডাক্তার ও মালিকপক্ষ এড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় অপারেশনের পর অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় ঢাকা হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। পরিবারের লোকজন সাথে সাথে বৃষ্টি আক্তারকে নিয়ে ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করার পর রিপোর্ট দেখে বলেন, বৃষ্টির ভুল চিকিৎসার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। অপারেশন করার সময় তার কয়েকটি নাড়ি ছিদ্র করে ফেলার কারণে সেখানে ময়লা প্রবেশ করে ক্যান্সার হয়েছে। বৃষ্টি আক্তারের মা বিথী বেগম বলেন, আমার মেয়েকে ভুল চিকিৎসা করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার মেয়ের এপেন্ডিসাইট না হলেও তারা আমার মেয়েকে এপেন্ডিসাইটের অপারেশন করে। আমার মেয়ে সুস্থ হওয়ার আগেই তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে বলেন তারা। বাড়িতে নিয়ে আসার কিছুদিন পর আবারও ব্যাথা শুরু হলে তারা আমার মেয়েকে আবার অপারেশন করে। অপারেশনের ৪/৫ দিন পর অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় আমার মেয়েকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আমরা সাথে সাথে ঢাকা নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেন, তাকে ভুল চিকিৎসার ফলে এই অবস্থা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।