নিজস্ব প্রতিবেদক
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিকভাবে লাইসেন্স প্রদানের প্রস্তাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব)। এ ধরনের আইন করা হলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছে। এ ধরনের আইন সংশোধনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বক্তারা।
গতকাল রবিবার মুন্সীগঞ্জ সদরের আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আরফিন। এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মুন্সীগঞ্জের খবর পত্রিকার সম্পাদক এড. সোহানা তাহমিনা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তুহিন, দৈনিক রজতরেখার সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আমানউল্লাহ প্রধান শাহিন, পৌর ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ শাহজাহান গাজী। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বাস্তুহারা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি গাজী শাহাবুদ্দীন, কাউন্সিলর নার্গিস আক্তার, মুন্সীগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. সামসুন্নাহার শিল্পী, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুজন হায়দার জনি, জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও মুন্সীগঞ্জ ক্লিনিক এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ আক্কাস আলী, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের ও নিরাপদ সড়ক চাই টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সভাপতি এম জামাল হোসেন মন্ডল, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোঃ সেলিম, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, মুন্সীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুবেল, মুন্সীগঞ্জ জেলার অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী বিপ্লব হাসানসহ জেলার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) জাতীয় পর্যায়ে সর্ববৃহৎ বেসরকারি সংগঠন হিসেবে ১৯৮৪ সাল থেকে হাজার হাজার নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের নিয়ে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতকে সমৃদ্ধ অর্থবহ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে। তৈরী করছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। যা জাতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে। দীর্ঘ ৩৮ বছরের পথচলায় জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন ও সফলতা অর্জন করেছে। দেশের জাতীয় অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করে তুলতে ভূমিকা রাখছে।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আরফিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে তেমনি জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদ (এনসিআইডি), এসএমই টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), এসএমই ফাউন্ডেশন (এসএমইএফ), ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্যবসায় প্রচার পরিষদ (বিপিসি), রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্ট ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক (ডিপিডিটি), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ), এটুআই, দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ) অন্যান্য বাণিজ্য সংক্রান্ত সমিতি এবং জেলা চেম্বারগুলো ছাড়াও জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন সরকারী কমিটিগুলোতে প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে সরকারের গৃহীত শিল্প নীতিমালা-২০১৬, এসএমই নীতিমালা-২০১৯ ও অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা, এসডিজি-২০৩০ অর্জন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) অধিকতর সংশোধনের জন্য প্রস্তুতকৃত খসড়া প্রণয়নে নাসিবের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে যেমন ধন্যবাদ জানিয়েছেন তেমনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে নাসিবকে না রাখায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
করোনা পরবর্তীকালে জাতীয় অর্থনীতির চাকা গতিশীল ও সচল করতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান করে সরকার প্রশংসার দাবিদার হয়েছে। যা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও এখন স্বীকৃত। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার কিছু ধারা ও উপধারা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। যেগুলো হচ্ছে –
১) বাধ্যতামূলক লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ১৫ (পনের) লক্ষ প্রান্তিক নিম্নআয়ের খুচরা বিক্রেতা আছে, যার অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাসমান দোকানী। কোনো বৈধ পণ্যের জন্য পৃথকভাবে লাইসেন্স নিতে হলে তা ব্যবসা নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। এই ধারাটি সরকারি নীতির পরিপন্থী।
২) ধূমপান এলাকার ব্যবস্থা বিলুপ্তিকরণ। ধূমপায়ীরা নির্দিষ্ট স্থানে ধূমপান করলে অন্যান্য অধূমপায়ীরা নিরাপদ থাকবে।
৩) খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ। খুচরা বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে ভোক্তা এবং বিক্রেতা উভয়েরই নিজস্ব অধিকার সংরক্ষণ করতে গিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে। মাঠপর্যায়ে আইন প্রণয়ন নিশ্চিত করা যাবে না।
৪) পাবলিক প্লেসের সংজ্ঞায় চায়ের দোকান অন্তুর্ভুক্তিকরণ। এটা করা হলে জীবিকা ও আয়ের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
৫) বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধকরণ। এটা করা হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নকল পণ্যে বাজার ছেয়ে যাবে। ফলে সরকার হারাবে বিপুল পরিমাণ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব।
৬) ফেরি করে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধকরণ। এই ধরনের কোন অবাস্তব আইন প্রবর্তন হলে নিম্নআয়ের সকল খুচরা বিক্রেতারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাদের দৈনিক আয়ের পরিমাণ কমে আসবে।
৭) সার্বিকভাবে জরিমানার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিকরণ এবং যেকোন প্রকার অভিযোগের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির অন্তর্ভুক্তিকরণ।