নিজস্ব প্রতিবেদক
খাদ্যে ভেজাল বলতে বোঝায় অধিক মুনাফার মানসে খাদ্যের প্রতি ক্রেতার আকর্ষণ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের রঙ বা বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো। আজকাল শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আম ব্যবসায়ীরা আম পাকাতে ব্যবহার করছেন বিষাক্ত ফরমালিন। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ফরমালিন মিশিয়ে আম পাকানো হলেও প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে আম পাকলেও বৈশাখ মাস যেতে না যেতেই এক শ্রেণীর অসাধু ফল বিক্রেতা অধিক মুনাফা লাভের আশায় গাছে আমের মুকুল আসার আগেই আম বাগান কিনে নেয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রামের অপরিপক্ক (পাকার উপযুক্ত হয়নি) আম মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ফরমালিন মিশিয়ে আম পাকানোর পর উপজেলা ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে র্যাব ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা ও জরিমানার ভয়ে আড়তদাররা ফরমালিন মিশাতে সাহস পাচ্ছেনা। কিছু নব্য আড়তদার রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আশায়। তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে গ্রাম-গঞ্জের অপরিপক্ক আম নির্দিষ্ট ভাড়া করা ঘরে মজুত করে মারাত্মক ক্ষতিকর ফরমালিন স্প্রে করে পাকানো হয়। প্রতিদিন পিকআপযোগে শত শত মণ বিষযুক্ত আম পাঠানো হচ্ছে স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সহজ-সরল মানুষ কোন কিছু না বুঝেই চকচকে রংয়ের আম ক্রয় করে দেহের মারাত্মক ক্ষতি করছে। পরীক্ষা ছাড়া চেনার কোন উপায় নেই কোনটি কার্বাইডমুক্ত আর কোনটি ফরমালিনযুক্ত। যার ফলে গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছে। ফরমালিন দিয়ে আম পাকানোর সময় অনেকেরই চোখে পড়ে। ফরমালিন দিয়ে আম পাকানো সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, মেডিসিন না দিলে আমের রং ভাল হয় না। তাছাড়া অপরিপক্ক আম দ্রুত পঁচে যায়। আম, কলা, কাঁঠালসহ অন্যান্য ফল দ্রুত পাকানো ও আকর্ষণীয় রঙের জন্য কার্বাইড মিশানো আম খেলে প্রাথমিক অবস্থায় ডায়রিয়া হতে পারে। খাদ্যে ভেজালের কারণে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন রোগ ও তার উপসর্গ। এর মধ্যে গর্ভবতী মা ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। বিভিন্ন ধরনের রোগ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কেমিক্যালযুক্ত খাদ্যের কারণে নষ্ট হচ্ছে আমাদের শরীরের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ যেমন – লিভার, কিডনি, হৃৎপিন্ড ফুসফুস, চোখ, কান ইত্যাদি। খাদ্যে ভেজালে লিভার ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, ব্লাড ক্যান্সার, কিডনী ফেইলর ইত্যাদি মরণব্যাধি রোগ দেখা দেয়। খাদ্যে ভেজাল একটি অনৈতিক ও অমানবিক কাজ। এগুলো কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। ইসলামে এ ধরনের কাজ চরমভাবে নিন্দিত। এতে কয়েক ধরনের অপরাধ জড়িয়ে আছে। ১. এটি প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি। ২. এটি মূলত অবৈধ পন্থায় অপরের অর্থ গ্রহণ যা আত্মসাতের শামিল। ৩. ভেজাল মিশ্রিত খাদ্য বিক্রয়ের সময় মিথ্যা কসম করতে হয়। ৪. মানুষকে কষ্ট দেয়া। ৫. মানুষকে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা। খাদ্যে ভেজাল দেয়া ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণার শামিল। প্রতারণা ইসলামে নিষিদ্ধ। হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূল (সাঃ) বাজারে খাদ্যস্তূপের ভেতরে হাত প্রবেশ করে দেখলেন ভেতরেরগুলো ভেজা। তিনি খাদ্য বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলেন, এমনটা করা হলো কেন ? বিক্রেতা বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে, হে আল্লাহর রাসূল ! নবী কারিম (সাঃ) বললেন, তাহলে তুমি খাদ্যগুলো ওপরে রাখনি কেন, যাতে মানুষ দেখতে পেত ? লোকটি চুপ করে রইল। রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।’ (মুসলিম: ১০২)
খাদ্যে ভেজাল দেয়ার ফলে যে অতিরিক্ত অর্থ আসে তা অবৈধ। অবৈধ পন্থায় অপরের সম্পদ ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছেন। কুরআন পাকে এরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না’। সূরা বাকারা: ১৮৮।
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ ! তোমরা একে অপরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। (সূরা নিসা: ২৯)।
তাই সব ব্যবসায়ীয় উচিত যেকোনো ধরনের খাদ্যে ভেজাল মেশানো থেকে বিরত থাকা। খাদ্যে ভেজাল না মিশিয়ে সততার সঙ্গে ব্যবসা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ব্যবসা করার তৌফিক দিন। আমীন।