নিজস্ব প্রতিবেদক
গজারিয়া উপজেলার টেঙ্গারচর ইউনিয়নের বৈদ্যারগাঁও পানি সাপ্লাই প্রকল্প নিয়ে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে টেঙ্গারচর ইউনিয়নের চারটি গ্রাম বৈদ্যারগাঁও, উত্তর শাহপুর, মিরেরগাঁও ও মিরপুরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সাপ্লাইয়ের পানি সংযোগ দেওয়া হয়। বৈদ্যারগাঁও হাজী কেরামত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত ট্যাংক হতে পাইপের মাধ্যমে উক্ত চারটি গ্রামে বাড়ি বাড়ি পানি সরবরাহ করা হয়। সরবরাহকৃত পানি পান করাসহ দৈনন্দিন সকল কাজে ব্যবহার উপযোগী হওয়ার কথা। যার জন্য সরবরাহকৃত পানির জন্য গ্রাহকদের মাসিক বিল পরিশোধ করতে হয়। সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ময়লা থাকায় এই পানি পান করার অনুপযোগী। অন্যান্য কাজেও এই পানি ব্যবহার বিপদজনক। অভিযোগ আছে যে, পানি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত পাইপ নিম্নমানের হওয়ায় এবং পাইপ ইনস্টলেশন কাজে ত্রুটি থাকায় পাইপ লাইনে অনেক ছিদ্র আছে। যার কারণে বাইরের ময়লা সহজেই পাইপের ভিতরে ঢুকে পড়ছে। সয়েল টেস্ট আর ডিপ বসানোতে অনিয়ম করায় পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আসছে। যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, পানিতে এক পিপিএমের বেশি আয়রন থাকলেই তা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আয়রনযুক্ত পানি পান করলে হাড়ে ইনফেকশন ও লিভার সিরোসিসসহ মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। দেহের বিভিন্ন স্থানে আয়রন জমা হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে। এছাড়াও আয়রনযুক্ত পানি ব্যবহারের ফলে চুলকানি, পেটের পীড়া, মাথার চুল ঝরে পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এদিকে পানির লাইনের সংযোগ ফি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া নতুন সংযোগের জন্য দীর্ঘসময় গ্রাহকদেরকে ঘুরতে হয় বলে এলাকার মানুষ অনেক ভোগান্তির মধ্যে আছে। সাপ্লাইয়ের পানি থাকার কারণে বর্তমানে এই চারটি গ্রামে পাবলিক হেল্থ থেকে আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েলও দেওয়া হয় না। যার ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে এই আয়রন ও ময়লাযুক্ত পানি সকল কাজে ব্যবহার ও পান করতে বাধ্য হচ্ছে। যা উক্ত চারটি গ্রামের মানুষের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সালাউদ্দিন মাষ্টার জানান, স্থানীয় জনসাধারনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কথা চিন্তা করে আমি ঠিকাদার ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে একাধিকবার আলোচনা করেছি। সর্বশেষ উনারা আমাকে জানিয়েছেন, খুব দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে দিবেন। সার্বিক বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আদেল এন্টারপ্রাইজ এর মোঃ ফারুক হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, উপকারভোগী জনসাধারণ ঠিকমত বিল পরিশোধ না করায় আমাদের যথাযথ সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জেনে পানি সরবরাহ লাইনের সংস্কার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।