নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় দিন দিন কমতে শুরু করেছে আবাদি জমির পরিমাণ। আবাদি জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে কৃষিপণ্য উৎপাদনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। জানা যায়, উপজেলার তিন চতুর্থাংশ মানুষ সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। এসব মানুষের জীবন-জীবিকা চলে কৃষি উৎপাদন ও কৃষি বিপণন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। তথ্যমতে, গজারিয়া উপজেলায় মোট জমির পরিমাণ ১৩,০৯২ হেক্টর। এর মধ্যে এক নীট আবাদি জমির পরিমাণ ৬,৯৯০ হেক্টর, কৃষি ব্লকের সংখ্যা ২৪টি, মোট কৃষক পরিবারের সংখ্যা ২৩,০৮৪টি। অকৃষি জমির পরিমাণ ১০,৭৯৮ একর। মোট খাদ্য চাহিদা ২৫,২৭৫ মে.টন। এর মধ্যে খাদ্য উৎপাদন হয় ১৬,০৯১ মে.টন। ফলে প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতি থাকছেই।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ, বসতি, কল-কারখানা, ইটভাটা তৈরি এবং আইন না মানায় কৃষিজমি ভরাট হচ্ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে ইচ্ছেমতো জমির ব্যবহার। ফলে প্রতি বছরই কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। এতে করে দিন দিন কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে বিচ্ছিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।
প্রস্তাবিত কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কৃষিজমিতে আবাসন, শিল্পকারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো ধরনের অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। জমি যে ধরনেরই হোক না কেন, তা কৃষিজমি হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। দেশের যেকোনো স্থানের কৃষিজমি এ আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত হবে, যা কোনোভাবেই ব্যবহারে পরির্বতন আনা যাবে না। এ আইনে আরও বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনকারী বা সহায়তাকারী অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। অথচ এসব নিয়ম-নীতি উপক্ষো করে উপজেলায় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের ব্যবসার সুবিধার জন্য প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানের সীমানা বাড়ানোসহ কম মূল্যে গ্রামের কৃষিজমিগুলো কিনে দখলে নিচ্ছেন। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন কৃষিজমি কমার মূল কারণ। দ্রুত কৃষিজমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা না নিলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
এলাকাবাসী জানান, জনসংখ্যা বাড়ার কারণে প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমিতে বাড়িঘর নির্মিত হচ্ছে। এছাড়া কম মূল্যে পাওয়া কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরিসহ বিভিন্ন অকৃষিজাত স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন ভূমিদস্যুরা স্থানীয় কৃষকদের জমি বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে বাকী সম্পত্তি জোর করে দখল করে মাটি ভরাট করে একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে।
এতে প্রতি বছর কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। বহুতল ভবনে একাধিক পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি। এছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট এলাকায় জমি দিয়ে কৃষিজমি কেনা থেকে বিরত রাখতে হবে।