প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপেক্ষিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশকে উপেক্ষা করে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চলছে নৌকা ঠেকানোর আন্দোলন। এতে নৌকা বিরোধী শেষ মুহুর্তের প্রচারণাও জমে উঠেছে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামীলীগের নেতা হয়েও শেখ হাসিনার নির্দেশকে উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন প্রতিটি ইউনিয়নেই। আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে লড়ছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা। এতে আওয়ামীলীগ সমর্থক ও ভোটাররা পড়েছেন বিপাকে। তারা কাকে ভোট দিবেন ও সমর্থন জানাবেন সেটা নিয়েও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন। অন্যদিকে নৌকা ঠেকাতে জামাত-বিএনপি জোট মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। এতে করে ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিভিন্ন ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটায় এই শঙ্কা ও আতঙ্ক প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে ভোটারদের মনে।
গজারিয়ায় পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ততই উদ্বেগ-আতঙ্ক বাড়ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে। জানা যায়, গজারিয়ায় ৭টি ইউনিয়নে ভোট হবে আগামী ৫ জানুয়ারী ২০২২ বৃহস্পতিবার। গজারিয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৮ জন, সদস্য পদে ২৩৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৮১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ভবেরচর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন মুক্তার হোসেন, মোটরসাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার সাহিদ মোঃ লিটন, বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন আলহাজ্ব নাজমুল হোসেন, মোটরসাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন শহিদুজ্জামান জুয়েল সরকার, আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আলহাজ্ব শাহআলম। টেঙ্গারচর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বোরহান উদ্দিন দেওয়ান, চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সালাউদ্দিন মাস্টার, ঘোড়া প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন কামরুজ্জামান ফরাজী। হোসেন্দী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন মনিরুল হক মিঠু, মোটরসাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আলহাজ্ব মো. আক্তার হোসেন ও আনারস প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মতিন মন্টু, চশমা প্রতীকে মো. রিয়াদ হোসেন দাউদ, অন্য দুইজন প্রার্থী হলেন মো. হুমায়ুন কবির ও মো. মমিন আলী। গজারিয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন শফিউল্লাহ শফি, আনারস প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দিন ঠাকুর ও ঘোড়া প্রতীকে দেলোয়ার হোসেন। গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ আলী খোকন, ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মোজ্জাম্মেল হোসেন, মোটরসাইকেল প্রতীকে জিয়াউল হক জিতু ও আনারস প্রতীকে শফিকুর রহমান। ইমামপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন হাফিজুজ্জামান জিতু, ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন মনসুর আহামেদ খান ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হান্নান সরকার।
ইতিমধ্যে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে একাধিক নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের কর্মকান্ড এই শঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পিছিয়ে নেই বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। সম্প্রতি দেখা গেছে, উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার মেম্বার ও তার কর্মীদের মারধরের ঘটনায় ৫ জন আহত হয়েছেন। বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি ও গ্রেফতার করে জনমনে সৃষ্টি করা হয়েছে আতঙ্ক। ইমামপুর ইউনিয়নে গুলিবর্ষণসহ গাড়ি, বাড়ি-ঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক ও কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন আহত হয়েছেন। ভবেরচরে নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এভাবে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে হানাহানি, হুমকি ধমকির ঘটনা ঘটছে। ফলে ভোটাররা নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীও। টেঙ্গারচর ইউনিয়নে চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ একলাছুর রহমান আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, আমি শঙ্কিত। ভোটকেন্দ্র দখলের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে। হোসেন্দী ইউনিয়নে মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোঃ আক্তার হোসেন একই আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। এছাড়াও একাধিক প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। নির্ভয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারছেন না স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিভিন্ন ইউনিয়নে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় সুষ্ঠু ভোট ও নির্ভয়ে ভোট দেয়ার পরিবেশ থাকবে কি না- এ ব্যাপারে ভোটাররা রয়েছেন শঙ্কা-উৎকণ্ঠায়। জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী গজারিয়ায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চায়। তারপরও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটাররা শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না। নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত মানুষের উপস্থিতি দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিভিন্ন সময়ে এলাকায় কিছু গুজব রটায় নতুন কোন কৌশলে ভোট ডাকাতির আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে গতকাল রবিবার বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ মহিউদ্দিন ঠাকুর। তিনি জানান, তার কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদেরকে হুমকি ধমকি প্রদান করা হচ্ছে। এদিকে উপজেলার ইউনিয়নগুলোর মধ্যে ৭টি ইউনিয়নেই রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন শক্ত অবস্থানে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরই মধ্যে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন (পিপিএম), জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা সবাই নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলবেন। ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন সাধারণ ভোটাররা। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ আরও নিরাপদ করে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবেন বলে দাবি এলাকার মানুষের।