নিজস্ব প্রতিবেদক
গজারিয়ায় আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে কিশোর অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দেখা যাচ্ছে কিশোরদের অপতৎপরতা। এই চক্রটি চলাফেরা শহুরে কিশোর গ্যাং এর স্টাইলে না হলেও এরা গ্রামীণ আবহতেই নিজেদের উপস্থাপনা করছে। ইদানিং পত্র-পত্রিকায় ‘কিশোর গ্যাং’ বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু খবর বেরোচ্ছেই। সমস্যাটি যে করোনার মতোই মহামারি হতে চলেছে খবরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া থেকেই সেটি স্পষ্ট। কিন্তু শহুরে এই কালচার এখন গ্রামেও চলে এসেছে। গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এইসব কিশোরদের নিয়ে সচেতন মানুষ শঙ্কিত। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। কিছু বিষয় থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ালেও অধিকাংশই থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। এ বিষয়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থানে আছে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি, ছোট রায়পাড়া, তেতৈতলা। এছাড়া আরো যেসব এলাকায় এসব সঙ্ঘবদ্ধ কিশোর অপরাধীদের দেখা যায় সেগুলো হলো হোসেন্দী ইউনিয়নের বলাকীর চর, লঘুরচর, ভবানীপুর, জামালদী, টেঙ্গারচর ইউনিয়নের টেঙ্গারচর, বৈদ্যারগাঁও, ভাটেরচর, ভবেরচর ইউনিয়নের ভবেরচর, লক্ষীপুরা, বাউশিয়া ইউনিয়নের চৌদ্দ কাউনিয়া, ইমামপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দী, বাঘাইকান্দী, ইমামপুর, গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের চাষীরচর, গুয়াগাছিয়া, জামালপুর, বালুয়াকান্দিসহ কম বেশী উপজেলার প্রায় সব গ্রামেই। পূর্ব থেকেই গ্রামে এক শ্রেণীর কিশোরদের আর্বিভাব ঘটেছিল যারা ছিল মূলত মা-বাবার অবাধ্য, স্কুল পালানোর দল। তারা প্রথম পর্যায়ে বড় সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করতে, তাদের সাথে চলতে ও তাদের সহযোগিতা করতেই পছন্দ করতো। নিজেকে সমবয়সী বন্ধুদের থেকে শক্তিশালী হিসেবে বুঝানোর জন্য আলাদা একটা ভাব নিয়ে চলাফেরা করতো। সববয়সী অন্যান্য ছেলেরা তখন ওদের কাছে ছিল অসহায়। ক্রমান্বয়ে এরাই একসময় মাদকসেবন, মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও সর্বশেষ রাজনৈতিক আশ্রয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়ে। কিন্তু কিশোর গ্যাং বলতে যা বুঝায় তা ছিল না। ইদানীং এই সময়ের এক শ্রেণীর কিশোর সঙ্ঘবদ্ধভাবে অপরাধ করছে। এরা সামান্য বিষয় নিয়ে মারামারি করছে। এক এলাকার ছেলে অন্য এলাকায় গেলে মারধর করছে, কাউকে গালি দিলে, যথাযথ সম্মান না দেখালে, এমনকি বাঁকা চোখে তাকানোর কারণেও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মেয়েলি বিষয় এবং সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব থেকেও মারামারির ঘটনা স্বাভাবিক পর্যায়ে পড়ছে। এরা আবার সঙ্ঘবদ্ধভাবে মাদক সেবন, মাদক বিক্রি ও জোগানের জন্য অহরহ চুরির ঘটনার সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে। আশঙ্কার বিষয় এরা ছোটখাট বিষয়ে রামদা, ছুরি, চাকু নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের উপর হামলা করছে। আবার কখনো কখনো দলবেঁধে পরিকল্পিতভাবে কারো উপর হামলা চালাচ্ছে। আর এ পথে একটু পেঁকে গেলে এলাকার বড় ভাইয়েরা এদের ব্যবসা-চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তার ও এলাকা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করছে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড় ভাই তথা দলীয় আশ্রয়-প্রশ্রয় আবার কখনো কখনো কিশোর অপরাধের আইন-কানুন লঘু হওয়ার কারণে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেগ পেতে হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এ বিষয়ে গজারিয়া কলিমউল্লাহ কলেজ এর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শারমীন সুলতানা বলেন, সাধারণত সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সীরাই কিশোর-কিশোরী হিসেবে বিবেচিত। কিশোর অপরাধের আইন-কানুন একেবারেই সংশোধনমূলক। অধিকাংশ সময় অপরাধ করলে সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো হয়, প্রমাণিত হলে প্রবেশন ও প্যারোলের ব্যবস্থা হয়। কখনো কখনো অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রইছ উদ্দীন জানান, গজারিয়ায় এখনো কিশোর গ্যাং চক্রের অস্তিত্ব আমরা পাইনি। তবে কিশোর অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা কিশোর অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে এদের আইন বিষয়ে সচেতন করা ও তাদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হবে। সেইসাথে পরিবারের সদস্যদেরও ডাকা হবে।
গজারিয়ায় কিশোর অপরাধ বাড়ছে ; গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং
আগের পোস্ট