নিজস্ব প্রতিবেদক
আকস্মিক জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনগুলোতে নেই সেই আগের চিরচেনা ভিড়। মহাসড়কে পরিবহন সঙ্কটের কারণে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসের দেখা পাচ্ছে না যাত্রীরা। দীর্ঘ ভোগান্তির আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ। গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এর প্রভাব গতকাল শনিবার সকাল থেকে পড়তে শুরু করেছে। সারাদেশের ন্যায় গজারিয়াতেও সড়কে বাস চলাচল ছিল কম, ফিলিং স্টেশনগুলোতে নেই ভিড়।
জানা যায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) পরিশোধিত এবং আমদানি/ক্রয়কৃত ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করে ভোক্তাপর্যায়ে পুনঃনির্ধারণ করেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের ভেতর ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা মূল্য ডিজেল প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, কেরোসিন প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, অকটেন প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা ও পেট্রোল প্রতি লিটার ১৩০ টাকায় বিক্রি হবে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ভারত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৬.০৩ রুপি নির্ধারণ করেছে যা এখনো বিদ্যমান আছে। এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪.০৯ টাকা এবং ১৩০.৪২ টাকা (১ রুপি=গড় ১.২৩ টাকা)। অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৩৪.০৯ টাকা এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ৪৪.৪২ টাকা কমে বিক্রয় হচ্ছিল। মূল্য কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানা গেছে। বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের কথা বলেছে সরকার। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে অস্থির বিশ্ব বাজারে এলএনজির দাম প্রতি ইউনিট ৭/৮ ডলার থেকে বেড়ে এখন ৩৫ ডলারের ওপরে চলছে। অপরিশোধিত তেলের দামও প্রতি ব্যারেল ৭০ ডলার থেকে বেড়ে ১০০ ডলারের আশপাশে উঠানামা করছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে গণপরিবহনে। ফিলিং স্টেশনগুলো অনেকটাই শূন্য। দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসের দেখা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির মধ্যে শত শত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন বাসের অপেক্ষায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর একটি বাস এলেও সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অনেক মানুষ। বাসগুলো আগে থেকে যাত্রীতে পরিপূর্ণ থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে বাসগুলোতে কেউ উঠতে পারছেন না।
উপজেলার বাউশিয়া, ভবেরচর, ভাটেরচর, বালুয়াকান্দী, জামালদী এলাকায় এই পরিস্থিতি দেখা গেছে। অভ্যন্তরীণ মিনিবাসগুলোও চলাচল করছে সীমিত। এই বিষয়ে এক বাস ড্রাইভার বলেন, সরকার আগে বাস ভাড়া ঠিক না করে তেলের দাম বাড়ানোতেই এই সমস্যা।
বাসের অপেক্ষায় ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী বলেন, কোনো শনিবারে গণপরিবহনের এমন সঙ্কট দেখিনি। ১ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি কোনো বাসে উঠতে পারছি না।
জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ভোগান্তির আশঙ্কাও করছেন সাধারণ মানুষ। এর প্রভাব নিত্যপণ্যের বাজারেও পড়বে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনে আরো বেশি ব্যয় বাড়বে। তাই জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি পুনঃ বিবেচনার আহ্বান জানান তারা।