নিজস্ব প্রতিবেদক
গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মধ্য বাউশিয়ায় গ্রামের এক যুবককে দোকান থেকে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত এএসআই মোঃ সুমন সরকারকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মধ্য বাউশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শাকিল ফরাজী গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মধ্য বাউশিয়া গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী এমদাদুল হক ফরাজীর ছেলে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী শাকিল ফরাজী বলেন, মধ্য বাউশিয়া বাসস্ট্যান্ডে তার খাজা আজমেরী ভ্যারাইটিজ স্টোর নামে একটি দোকান আছে। গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি গজারিয়া থানার এএসআই সুমনের মাধ্যমে জানতে পারেন তার নামে নাকি নারায়ণগঞ্জে বন্দর থানায় একটি মাদক মামলা হয়েছে। বিষয়টির প্রতিবাদ করে সঙ্গে সঙ্গে তিনি গত কয়েক মাসের ভেতরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় যাননি বলে জানান। এ সম্পর্কিত কাগজপত্র দেখতে চাইলে অপারগতা পোষণ করেন এএসআই সুমন।
এদিকে গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকারে শাকিল ফরাজীকে দোকান থেকে তুলে নেন এএসআই সুমন। এসময় গাড়িতে তারা দু’জন ছাড়াও টি-শার্ট পরিহিত এসআই পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি, কনস্টেবল রফিকুল ও গাড়ির চালক ছিলেন। চালক গাড়িটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন চর বাউশিয়া এলাকার এক নির্জন বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েই একটি পিস্তল দেখিয়ে তাকে দুই লাখ টাকা দিতে বলেন এএসআই সুমন। দাবিকৃত টাকা না দিলে মাদক মামলার আসামি হিসেবে তাকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি।
এসময় শাকিল ফরাজী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করে তাকে হ্যান্ডকাপ পরানোর চেষ্টা করা হয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন এগিয়ে আসলে তারা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করেন।
ভুক্তভোগী শাকিলের মা রোকসানা বেগম বলেন, সকাল ৯টার দিকে মাইক্রোবাসে পুলিশ শাকিলকে তুলে নেওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। দীর্ঘ ২-৩ ঘণ্টায় গজারিয়া থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা শাকিলের খোঁজ করেন। পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন একটি জঙ্গলের ভেতরে শাকিলকে আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় সেখান থেকে পুলিশের হাত থেকে শাকিলকে উদ্ধার করে তারা নিয়ে আসেন।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার এএসআই সুমন জানান, তার এক বন্ধু নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় কর্মরত। সেখানে শাকিলের নামে একটি মাদক মামলা হয়েছে। সেই বন্ধু আজ (গতকাল সোমবার) গজারিয়া থানায় আসে এবং বিষয়টি নিয়ে তারা নিরিবিলি কথা বলার জন্য শাকিলকে ওই বাগানে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন বলেন, এরকম একটা কথা আমিও শুনেছি। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে এএসআই সুমনকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এএসআই সুমন সরকারকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বাউশিয়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। তার বিরুদ্ধে অহেতুকভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল।
গজারিয়ায় যুবককে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি, এএসআই ক্লোজড
আগের পোস্ট